সাগরে লঘুচাপ, আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’
২০ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৩০
ঢাকা: আন্দামান সাগর ও এর কাছাকাছি এলাকার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসার এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ক্রমান্বয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। যে কারণে দেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে একটি ঘুর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ফোরকাস্ট সিস্টেম-জিএফএস। সংস্থাটির সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র গতিবেগ হতে পারে ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় বিভাগ খুলনা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল জিএফএস পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে অর্থাৎ ২২ থেকে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে একটি ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। সংস্থাটি এটিকে সুপার সাইক্লোন উল্লেখ করে বলেছে, সিত্রাং উপকূলে আঘাত হানতে পারে। জিএফএস’র পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, সিত্রাং উপকূল অঞ্চল লণ্ডভণ্ড করে দিতে।
এর আগে, গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) সংস্থাটি তাদের আরেক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, সিত্রাং দুর্বল হয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর হতে পারে। বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জসংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় যে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, এটিই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, সিত্রাং বাংলাদেশের খুলনাঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গেলে এর গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। এদিকে সিত্রাং বয়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের অনেক স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হলে তার আগে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। এরপর সেটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘুর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আন্দামান সাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
তবে আবহাওয়ার গতিবিধি অনুযায়ী যেকোনো ঘূর্ণিঝড়ের আগে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। সিত্রাং কতটা শক্তিশালী হতে পারে কিংবা এটি কোন কোন অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনই সেসব বলার মতো সময় হয়নি। তবে দেশের পশ্চিমাঞ্চল হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে বয়ে যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেও আরও তিনদিন সময় লাগবে।’
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসও বলছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। সেখানে আরও বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া সাধারণত শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
জিএফএস’র তথ্য মতে এবারের সম্ভাব্য ঘুর্ণিঝড়ের নাম সিত্রাং। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনে জাতিসংঘের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১৩টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেন।
আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ নামের ক্রম অনুযায়ী এই নাম দিয়ে থাকেন। এবার বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হতে পারে সেটির নাম হবে সিত্রাং। এই নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলে দুর্যোগের সৃষ্টি হয়। তবুও এটি আবহাওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যা পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে।
জানা যায়, পৃথিবীতে গড়ে প্রতিবছর ৮০টি ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। এর বেশিরভাগই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়। কিন্তু যে অল্প কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে তার রূপ হয় ভয়াবহ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে বড় আতঙ্কের নাম ঘূর্ণিঝড়। সিডর, আইলা, আম্পানের মতো ঝড়ের কবলে পরে সর্বস্ব হারানোর ক্ষত মানুষের মনে এখনো দাগ কেটে আছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম