মানিকগঞ্জে দীর্ঘ হচ্ছে কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও ইছামতির ভাঙন
২২ অক্টোবর ২০২২ ০৯:২৩
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা ইছামতীর ভাঙনের তাণ্ডব কাটতে না কাটতেই অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদী তীরবর্তী এলাকায়। সপ্তাহ খানেক ধরে পানি বেড়ে ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। ফলে ইছামতী, পুরাতন ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদী পাড়ের মানুষজনের মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতংক।
সরকারি পর্যায়ে দ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেখা গেছে, উপজেলার কুশুন্ডা এলাকায় পাকা রাস্তা পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পাকা সড়ক একপাশে কাত হয়ে ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় এই সড়কের বিশাল অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে ঘিওর উপজেলায় ভাঙনে নদী গর্ভে চলে গেছে প্রায় অর্ধশত বসতভিটা, ব্রিজ, কালভার্ট, ফসলি জমি, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গরুর হাটসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা।
এখন কার্তিক মাসে অসময়ের পানি বৃদ্ধি ও ভাঙনে নদী তীরে ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে ভিটামাটি হারা মানুষের সারি। ভাঙন এলাকার মানুষজন আসবাবপত্র আর অন্যান্য সামগ্রী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ঘিওর সদর ইউনিয়নের পঞ্চরাস্তা এলাকায় পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর উত্তর পাড়ে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে কমপক্ষে ১৫টি বসত বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদী ভাঙনে। এই ভাঙনে শ্রীধরনগর, কুস্তা, মাইলাগী, ঘিওর পূর্বপাড়া, ঘিওর নদীর উত্তর পারের বাজার এবং ব্রিজসহ ১২টি প্রতিষ্ঠান হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভয়াবহ হুমকির মধ্যে রয়েছে উপজেলা সরকারি খাদ্যগুদাম ও মহাশ্মশান।
এছাড়া ইছামতি শাখা নদীর ভাঙনের শিকার বড় রামকান্তপুর-কুঠিবাড়ি এলাকার ২৬টি পরিবার। এই নদীর ভাঙনে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর গরুর হাট অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে মাসখানেক আগে। ভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছে কুস্তা কফিল উদ্দিন দরজি উচ্চ বিদ্যালয়, কুস্তা ব্রিজ, ঘিওর-গোলাপনগরের রাস্তা, বেপারীপাড়া কবরস্থান, রসুলপুর গ্রাম ও কবরস্থান, বেপারীপাড়া কবরস্থান হুমকির মধ্যে রয়েছে।
এদিকে কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে ১ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও ১৫টি বসতবাড়ি। নদী ভাঙনের হুমকিতে আছে আরও অর্ধ শতাধিক বসতভিটা, বানিয়াজুরী ইউনিয়ের তরা রমজান আলী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা, এতিমখানা, তরা শ্মশানঘাট ও মন্দির, একটি বাজার, মির্জাপুর এলাকার রাস্তা, জাবরা নদীর উত্তর পাড়ের বির্স্তীণ ফসলি জমি ও বসতভিটা।
কালীগঙ্গা নদীতে ফসলি জমি হারানো জাবরা গ্রামের মো. আজিম মিয়া বলেন, ‘ইতিমধ্যে কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনে আমার ২ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছরই ভাঙনের শিকার হতে হয় আমাদের। অসময়ে নতুন করে ভাঙনে আমার মতো আরও অনেকেই ফসলি জমি হারাচ্ছেন।’
ঘিওর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল জানান, অসময়ে নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বড় রামকান্তপুর-কুঠিবাড়ি এলাকায় ইছামতি শাখা নদীর ভাঙন আতংকে রয়েছে কমপক্ষে ২৫টি পরিবার। আর ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস আর আনসারী বিল্টু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের উত্তরতরা, নকিববাড়ি এলাকায় এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধে পদক্ষেপ না নেওয়া গেলে এলাকার অনেক বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি নদীগর্ভে এবং বিলীন হয়ে যাবে।’
ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ‘ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ইতিমধ্যে ঘিওর হাট, কুস্তা ব্রিজ ও খাদ্যগুদাম, শ্মশান মন্দির ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা, বাঁধ ও সংস্কারসহ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে। হঠাৎ পানি বাড়ার সঙ্গে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘সাড়ে আট হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে। আর কুস্তা বেইলি ব্রিজ রক্ষায় গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। পানির প্রবাহ কমে গেলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’ এছাড়া ভাঙনরোধে তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ধলেশ্বরী নদী পুনঃখনন কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমও