প্রকৃতিতে হেমন্ত, বর্ষা মাথায় নিয়েই শীত আসি আসি
২৩ অক্টোবর ২০২২ ০৮:২২
ঢাকা: বাংলা বর্ষপুঞ্জিতে সবেমাত্র কার্তিকের শুরু। প্রকৃতিতে বইছে হেমন্তের রাজত্ব। শীত আসতে এখনো বাকি প্রায় দুই মাস। কিন্তু ভোরের কুয়াশা, হিমেল হাওয়া আর সোনামাখা রোদ শীতের আগমন জানান দিচ্ছে। দিনের ভাগে সূর্যের প্রখরতাও কমেছে খানিকটা। এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে এখনি শীতের আবহ দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলছে।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, অক্টোবর মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও নভেম্বর থেকে রাতে কমতে থাকবে। আর পুরোপুরি শীতের আমেজ পেতে অপেক্ষা করতে হবে ডিসেম্বরের। তবে পিছু ছাড়ছে না বর্ষা। চলতি মাসেও লঘুচাপসহ ঝড়-বৃষ্টির হওয়ার কথা রয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।
ইংরেজি বর্ষপুঞ্জিতে এখন অক্টোবর শেষ হচ্ছে। আবহাওয়ার ত্রৈমাসিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই সময়ে সাগরে একটি লঘুচাপের কথা বলা হয়েছে, যা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ ছাড়া দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩টি বিজলী চমকানোসহ বজ্রঝড় বয়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে খানিকটা বেশি থাকলেও রাতে কিছুটা কমে যাবে। এ সময় দেশের প্রধান নদ-নদীসমুহে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
নভেম্বর মাসে শীতের আবহেই স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পুর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বলা হয়েছে, এ মাসেই দুই নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে সাগরে। যার একটি রূপ নিতে পারে ঘুর্ণিঝড়ে। তবে কমতে থাকবে তাপমাত্রা। আর ডিসেম্বরে পুর্বাভাস রয়েছে শৈত্যপ্রবাহের।
দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুইটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তখন তাপমাত্রা নামতে পারে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এ মাসে শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকতে পারে। তবে সেইসঙ্গে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতেরও পূর্বাভাস রয়েছে।
আর গত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস বলছে, বিকেল থেকে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। সারাদেশের আবহাওয়া সাধারনত শুষ্ক বিরাজ করছে। এদিকে আগামী তিন দিনে আন্দামান সাগর ও এর কাছাকাছি দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
শীতের দেখা কবে মিলছে এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, সাগরের লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এই নিম্নচাপ পরিণত হতে পারে ঘুর্ণিঝড়ে। তবে আসলেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের যে সিমটম থাকে সেগুলো ধীরে ধীরে ডেভলপ হচ্ছে তিনি বলেন, ‘এ সময়ে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই যদিও কিন্তু আবহাওয়া শুষ্ক হতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে শীতের দেখা পাওয়ার অপেক্ষার পাল্লা বেশ ভারী। তাপমাত্রার পারদ নামতে অপেক্ষা করতে হবে আরো এক মাস।’
এদিকে প্রকৃতিতে হেমন্ত থাকলেও শীত শীত অনুভব হচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই একটা শীতল অনুভূতি হচ্ছে। এরই মধ্যে শহরে অলিগলিতে শীতকে সামনে রেখে পিঠা পুলিসহ নানা ধরনের খাবারের প্রস্তুতি চলছে। যদিও হেমন্তের মূল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় গ্রাম বাংলায়। কুয়াশার চাদর এরইমধ্যে আলতো মায়ার চাদর বিছিয়ে দিয়েছে গ্রামের পথে প্রান্তরে। বর্ষায় লাগানো আমন ধান পেকে এসেছে। ফসলের মাঠ তার পুরো সৌন্দর্য নিয়ে সেজেছে।
এদিকে তাপমাত্রার পারদও ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা হেমন্ত ঋতু শুরুর এ কয়েকদিনে সবচেয়ে কম। তাপমাত্রা কম দেখা গেছে, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, ডিমলা এবং রাজারহাট এলাকায় তাপমাত্রা কমে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, শ্রীমঙ্গল, যশোর, ঈশ্বরদী, তাড়াশে তাপমাত্রা ছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, অক্টোবর থেকেই মূলত শীত শীত অনুভব হতে থাকে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন বাংলাদেশের ঋতু তার বৈশিষ্ট হারাচ্ছে। বর্ষায় বর্ষা নেই, গ্রীষ্মে অতিরিক্ত তাপমাত্রা, আবার শরৎ হেমন্তে নেমে আসে শীত। বর্ষা তো সঙ্গে রয়েছেই।
সারাবাংলা/জেআর/একে