সিত্রাংয়ের প্রভাবে উত্তাল নদী, বড় ক্ষতির আশঙ্কা সুন্দরবনে
২৪ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৩০
ঢাকা: উপকূলের রক্ষাকবচ সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বেড়ে নদীগুলো উত্তাল হয়ে উঠেছে। এরইমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্যাম্প ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানির ঢেউয়ের কারণে বনের ভেতরের বিভিন্ন স্টেশন জেটি ভেঙে গেছে।
সুন্দরবনের ভেতরে বিভিন্ন স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ, থেমে থেমে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেড়েই চলছে। সুন্দরবন পশ্চিমাঞ্চলের স্টেশনে বিদ্যুৎ না থাকায় ওয়াকিটকি বার্তাও বন্ধ হয়ে গেছে। বিকল্প পদ্ধতিতে ক্যাম্পে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে খুলনা বন বিভাগের কন্ট্রোলরুম থেকে জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুন্দরবন পূর্বাঞ্চলের কটকা, কচিখালী, বগি এলাকায় নদীর প্রচণ্ড ঢেউয়ে সুন্দরবনের অনেক গাছ ভেঙে পড়েছে। ওই এলাকার ট্রলারসহ অন্যান্য নৌযান সুন্দরবনের ভেতরে ছোট ছোট খালের নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
বিভিন্ন ক্যাম্পে কর্তব্যরত ফরেস্টাররা জানিয়েছেন, সুন্দরবন পূর্বাঞ্চল শরণখোলা, বগী এলাকার জনগণকে নিরাপদ আশ্রয় যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এখনও সুন্দরবনের কাছাকাছি আসেনি। সন্ধ্যা কিংবা রাতে ঘূর্ণিঝড়টি এই এলাকায় আঘাত আনতে পারে। রাতে আঘাত আনলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
বগি ফরেস্ট ক্যাম্পে কর্মরত হারুন জানান, তার ফরেস্ট অফিসের কাছে বড় একটি গাছ ভেঙে পড়েছে তাদের অফিস ঘরের উপর। নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। ঢেউয়ের আঘাতে একটি ট্রলারের পেছনের অংশ ভেঙে গেছে। বগি এলাকার বনের ভেতরেও অনেক গাছ ভেঙে পড়েছে। হরিণগুলোকে উঁচুস্থানে আশ্রয় নিতে দেখেছেন তিনি।
ফরেস্ট ভ্রমণ সহকারী দেওয়ান মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড বাতাস, নদীতে ঢেউ। ফলে বনে বর্তমান কি পরিস্থিতি, বণ্যপ্রাণির অবস্থা কি তা জানা সম্ভব হচ্ছে না। যারা বনের ভেতরে ডিউটিতে রয়েছে তাদের ওয়ারলেস সেটও বন্ধ। বিদ্যুতের অভাবে চার্জ দেওয়া যায়নি। গত দুই দিন ধরে এই অবস্থায় রয়েছি। রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।’
খুলনা রেঞ্জের ডিএফও ড. আবু নাসের মহসিন সারাবাংলাকে জানান, প্রচণ্ড বেগে বাতাস এবং বৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রঘেঁষা ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্পের কর্মরতদের ক্যাম্প ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ (বাগেরহাট) ডিএফও বেলায়েত হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত যে তথ্য রয়েছে, তার মধ্যে নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ এবং থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইছে। সিত্রাং রাতে আঘাত আনলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলেও আশংকা করছেন তিনি।
দেশের উপকূলীয় ১৩টি জেলায় তাণ্ডব চালাতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এমনটাই জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। জেলাগুলো হচ্ছে- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং ফেনী জেলায় আঘাত করবে। অর্থাৎ বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গা ও চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের দীপাঞ্চলগুলো বিশেষ করে মহেশখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এসব এলাকা থেকে মানুষদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
ধ্বংসাত্মক রূপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং, আসতে পারে মহাবিপদ সংকেত
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও