সিত্রাং: চট্টগ্রামের ৪ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে
২৪ অক্টোবর ২০২২ ১৯:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতের আশঙ্কায় চট্টগ্রামের উপকূলসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় চার লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এজন্য এক হাজার ৯৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাঠে নামানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় আরও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১ হাজার ৪৪০টি বিদ্যালয় এবং আরও নয়টি ভবন প্রস্তুত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) এসব আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপকূল সংলগ্ন এলাকায় যাতে কোনো জাহাজ, নৌযান, ট্রলার ভিড়তে না পারে, সে বিষয়ে কোস্টগার্ডকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য কোস্টগার্ডের নিজস্ব নৌযানগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বাধ্যতামূলকভাবে কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সকল বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সন্দ্বীপ, বাঁশখালীসহ উপকূল সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় চার লাখ মানুষকে আমরা সরিয়ে নেওয়ার টার্গেট নিয়েছি। কোনো ধরনের প্রাণহানি যাতে না হয়, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ১৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে অলরেডি মাঠে নামানো হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সবধরনের নৌযান কোস্টগার্ডের মনিটরিংয়ে থাকবে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে পাহাড়ে মাইকিং করে বাসিন্দাদের সরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকেও মাইকিং করা হচ্ছে বলে এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
পাশাপাশি নগরবাসীকে জরুরি সেবা দিতে ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে নগরীর ৭৪টি সাইক্লোন শেল্টার ও চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সোমবার সকালে নগরীর টাইগারপাসে নগর ভবনের সম্মলেন কক্ষে ঘুর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
চসিকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চসিকের জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর- ০২৪১৩৬০২৬৭ ও ০১৭১৭১১৭৯১৩। দূর্যোগ পরবর্তী সময়ের জন্য শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা দেয়ার জন্য মেডিকেল টিম, ওষুধ রাখা হয়েছে। মেডিকেল টিমের নম্বর : ০১৮১৭৭০৬০৫৫ এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে ০১৯১২৩৪২১৪৪ নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মহানগরীসহ ১৫ উপজেলায় ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জেলার ১৫ উপজেলার ২০০টি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম কাজ করবে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৫টি করে মেডিকেল টিম, ৯টি আরবান ডিসপেনসারির অধীন ৯টি টিম, চট্টগ্রাম স্কুল হেলথ ক্লিনিকে একটি টিম ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। চার কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বন্দরে পরিচালক-পরিবহন (০২-৩৩৩৩১৯৭১১, পিএবিএক্স ৬০৭২), হারবার মাস্টার (০২-৩৩৩৩২৬৯১৬), পরিচালক-নিরাপত্তা (০১৫৫০ ০০৫৩১১, ০১৫১৯ ১১৪৬৪৬) এবং সচিব (০২-৩৩৩৩৩০৮৬৯) দায়িত্ব পালন করবেন।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিকেল তিনটা থেকে সবধরনের বিমান ওঠানামা বন্ধ আছে। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আওতাধীন বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিমান সংস্থাগুলোকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেজন্য সংস্থাগুলো ফ্লাইটের রি-শিডিউল করেছে। ফলে শিডিউল বাতিলের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম