Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার্থীর মৃত্যু: অবহেলা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠনের নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৫৮

ঢাকা: রাজধানীর খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তোহা ওরফে প্রিন্স (১৭) ভুল চিকিৎসায় খাদ্যনালী ছিদ্র হয়ে মারা গেছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। আর এ ঘটনায় চিকিৎসকের অবহেলা আছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যানকে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছে। চিকিৎসক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীরের অবহেলার বিষয়টি অনুসন্ধান করে কমিটিকে আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) ওই শিক্ষার্থীর বাবার করা রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

রুলে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলা নিরুপণ করে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি, ঢাকা জেলা প্রশাসক, খিদমাহ হসপিটাল (প্রা.) লিমিটেড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবিরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে শিক্ষার্থীর বাবা আবুল কাশেম এ রিট দায়ের করেন। আবেদনের আইনজীবী ছিলেন মুনতাসীর মাহমুদ রহমান। শুনানি করেন আইনজীবী অনিক আর হক ও বিভূতি তরফদার।

রিটে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ‘ভুল চিকিৎসায় খাদ্যনালী ছিদ্র হয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ভুল চিকিৎসায় খাদ্যনালী ছিদ্র হয়ে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নবম শ্রেণির ছাত্র তরিকুল ইসলাম তোহা ওরফে প্রিন্স গত ২৮ ডিসেম্বর মারা গেছে। মুগদায় পরিবারের সঙ্গে প্রিন্স থাকতো।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর খিলগাঁওয়ের খিদমা হাসপাতালে প্রিন্সের পিত্তথলি অপসারণ করা হয়। রাত ১২টার দিকে অপারেশন করেন ক্যানসার হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবির। তবে অপারেশনের পর জটিলতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় পরদিন তাকে জোর করে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। বাসায় ফিরে প্রিন্সের অবস্থার আরও অবনতি হলে ২১ ডিসেম্বর খিদমাহ হাসপাতালে তাকে ফের নেওয়া হয়।

প্রিন্স মুমূর্ষু অবস্থায় চলে গেলেও ডা. জাহাঙ্গীর কবির পাত্তা দেননি- এমন অভিযোগ করে প্রিন্সের মা পারভীন আক্তার বলেন, ‘ডা. জাহাঙ্গীর কবির অবস্থা জেনে রক্তের টেস্ট ও আলট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন। কিন্তু হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা ২১ ডিসেম্বর রাতে টেস্ট করতে দেননি। প্রিন্সের অবস্থা আরও অবনতি হলে মধ্যরাতে খিদমা হাসপাতাল থেকে বলা হয়- প্রিন্সের আইসিইউ লাগবে। স্থানান্তর করতে হবে অন্য কোনো হাসপাতালে। দিশেহারা হয়ে স্বজনরা তাকে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেন। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, তার অবস্থা খুবই খারাপ। বেশকিছু পরীক্ষার পর দেখা যায়- তার খাদ্যনালীতে বড় ধরনের ছিদ্র হয়ে ভেতরে পানি জমেছে। পানির সঙ্গে খাবারও গেছে। এরপর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে দুই দফা অপারেশন হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। ২৮ ডিসেম্বর প্রিন্স মারা যায়।’

স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রিন্সের চিকিৎসা দেখভাল করেছেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ফয়সল। গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি আনুষ্ঠানিক কথা না বললেও দাবি করেন, আগের অপারেশনে বড়ধরনের ভুল ছিল। মৃত্যু সনদেও কারণ হিসেবে উল্লেখ আছে খাদ্যনালীতে ছিদ্রের কথা।

প্রিন্সের মৃত্যুর ঘটনায় ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবির দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো রকম অবহেলা করিনি।’ এ বিষয়ে খিদমাহ হাসপাতালের কেউ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

অবহেলা চিকিৎসক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর