শিশুদের স্নায়ুরোগ চিকিৎসায় জিন থেরাপি শুরু দেশে, শঙ্কা খরচ নিয়ে
২৫ অক্টোবর ২০২২ ২২:২৯
ঢাকা: দেশে প্রথমবারের মতো দুরারোগ্য স্নায়ুরোগ স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলো জিন থেরাপি। জন্মগত এই রোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশে প্রথম কোনও শিশুকে জিন থেরাপি প্রয়োগ করা হলো। এর মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল।
সংশ্লিষ্টরা এটিকে চিকিৎসা সেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন বললেও খরচ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের মূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা। এটি সরকারিভাবে তাকে প্রয়োগ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিশুর ইনজেকশন থেরাপিতে সরাসরি যুক্ত ডা. চৌধুরী মোহাম্মদ ফুয়াদ গালিব এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সকাল ১০টায় রাইয়ানকে এ ইনজেকশন দেওয়া হয়। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তাকে ক্যানোলার মাধ্যমে দুরারোগ্য স্নায়ুরোগ স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফির (এসএমএ) ওষুধ শরীরে দেওয়া হয়। রাইয়ান মানিকগঞ্জের বাসিন্দা। বাবা-মায়ের বিয়ের ১০ বছর পর তার জন্ম হয়।
এদিন চিকিৎসকরা জানান, স্পাইনাল মাসকুলার এট্রফি একটি বিরল ও জটিল স্নায়ুরোগ যা জন্মগতভাবে মানবদেহে থাকে। জিনগত ত্রুটির কারণে এটি হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাংসপেশি ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকে। যার ফলে এসব শিশুরা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। তবে তাদের বুদ্ধিমত্তা ঠিক থাকে। পরবর্তীতে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার কারণে আক্রান্ত শিশুরা মৃত্যুবরণ করে।
তারা বলেন, এই রোগের জিন থেরাপি চিকিৎসায় প্রতি ডোজের মূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা। তবে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালকে এটি বিনামূল্যে প্রদান করেছে বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নোভার্টিস।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ১০ বছরের ইতিহাসে একটা ঐতিহাসিক দ্বার উন্মোচন হয়েছে। একটা বাচ্চাকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে আমরা বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছি। সে এখন নিশ্চিতভাবে আকাশ দেখতে পারবে, নিশ্বাস নিতে পারবে। অধ্যাপক ডা. নারায়ণ তার টিম নিয়ে সেটি করেছেন। এজন্য আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত।
তিনি বলেন, আমরা অধিকাংশ রোগীকেই ভালো করতে পারি না। শতকরা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগী ভালো হয়। এক্ষেত্রে কিছু বিরল রোগ আছে, যেগুলোর মৃত্যু অবধারিত। সেগুলো নিয়ে আমাদের কিছুই করার থাকে না।
অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আমাদের ৪০ থেকে ৪২ ভাগ রোগীই শিশু। এই শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আলাদা একটা এটেনশন (মনযোগ) দরকার। এজন্য আমি স্বাস্থ্য সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ, আমাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা না থাকায় অসংখ্য রোগীকেই বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসার দারস্থ হতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ সেবা সম্পূর্ণ ফ্রি। কিন্তু একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেডে রাত পার হলেই ৫০ হাজার টাকা। এর বাইরে তো বিভিন্ন পরীক্ষা-ফি তো আছেই। কয়টা পরিবারের এতো খরচ বহনের সুযোগ আছে? এক্ষেত্রে সরকারি সেক্টরকে আরও উন্নত করতে হবে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সুন্দরভাবে সাজান, যেকোন ধরনের পরামর্শ, সহযোগিতা আমরা করব।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘দেশে প্রথমবারের মতো জিন থেরাপি চিকিৎসা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য বড় একটি আশার দিক। কিন্তু এর যে ব্যয়, সেটি আসলে রোগীদের জন্য বহন করা খুবই কঠিন। আমরা চাইলেও এ নিয়ে কিছু করতে পারছি না।’
সচিব বলেন, ‘আমরা আশা করছি একটা পর্যায়ে ওষুধটির দাম কমে যাবে। আমাদের হাতের নাগালে নেমে আসবে। তখন আমরা এই চিকিৎসা আমাদের দেশে নিয়মিত করতে পারব।’
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই রোগটির চিকিৎসা না থাকার কারণে প্রতি বছর বিশ্বে অসংখ্য শিশু মারা যায়। এ রোগে সাধারণত শিশুদের স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়ে যায়। যেসব স্নায়ুকোষ মাংসপেশী নিয়ন্ত্রণ করে, সেই স্নায়ুকোষগুলো নষ্ট হওয়ার কারণে মাংসপেশী দুর্বল হতে থাকে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ এই রোগ সম্পর্কে অবগত নয়। এই রোগে নবজাতকরা প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্রমান্বয়ে তারা কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজে ভোগে।
হাসপাতালের পরিবেশ সম্পর্কে সচিব আরও বলেন, নিউরোসায়েন্সে প্রচুর সংখ্যক রোগী থাকে, এতো যে ভেতরেই ঢোকা যায় না। এরপরও এখানকার প্রশাসন দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন। এক্ষেত্রে আমি বলি যে, লিডারশিপ দক্ষতা খুবই বড় গুণ।
সারাবাংলা/এসবি/একে