ওপারে মেঘালয়, এপারে দিগন্ত বিস্তৃত লাল শাপলার রাজ্য
২৭ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৪০
সিলেট: ওপারে ভারতের মেঘালয়। আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। সামনে ঠিক সমতলে বাংলাদেশের ডিবির হাওর, দেশি মাছের অভয়ারণ্য। প্রকৃতির মাখামাখি গোটা এলাকাজুড়ে। চোখ জুড়ায়, মনও জুড়ায়। তার ওপর গত ক’বছরে বাড়তি সৌন্দর্য এনে দিয়েছে লাল শাপলা। সকাল কিংবা বিকেলে সোনা রোদে লাল শাপলার ঝিলিক নজর কাড়ে পর্যটকদের। আর এই দৃশ্য অবলোকন করতে শুধু সিলেটই নয়, গোটা দেশের পর্যটকরা ছুটে যাচ্ছেন জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরের লাল শাপলার বিলে।
কথিত আছে জৈন্তিয়া রাজা বিজয় সিংহের সমাধিস্থল রয়েছে লাল শাপলার বিলে। মুক্তিযুদ্ধের চার নম্বর সাব সেক্টর মেঘালয়ের মুক্তাপুর। কেবল সৌন্দর্য নয়, সিলেটের জৈন্তাপুরের লাল শাপলার বিল প্রাগৈতিহাসিক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
স্থানীয়দের মতে, জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাম সিংহের মামা বিজয় সিংহকে এই হাওরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। সেই স্মৃতিতে নির্মিত দুইশ বছরের পুরাতন একটি মন্দিরও রয়েছে লাল শাপলার বিলে।
লাল শাপলা বিলের অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশ। স্থানীয় ভাষায়, প্রাকৃতিক ভাবেই চারটি বিল- ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রী বিলসহ ৯০০ একর এলাকা জুড়েই লাল শাপলার ‘রাজ্য’।
ডিবির হাওর মাছের অভয়ারণ্য। একসময় এই হাওরে গোটা বছরই পানি থাকতো। এখনো শুস্ক মৌসুম শুরু হলেই শুকিয়ে যায়। ফলে লাল শাপলার স্থায়ীত্বও থাকে মাসখানেক। পানি না থাকার কারণে শাপলাও থাকে না। বর্ষায় ফের পানি বৃদ্ধি পেলে শাপলা আচ্ছাদিত হয়ে উঠে গোটা হাওর। কয়েক দিন ধরে লাল শাপলার এই অপরূপ দৃশ্য ভেসে উঠছে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের এই জনপদে। ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে নিয়ে শহুরের মানুষ ছুটে যান বিলে শাপলা দেখতে। নৌকা নিয়ে ঘুরে প্রশান্তির ছোঁয়া পান ওখানে।
পরিবেশ কর্মী আব্দুল হাই জানান, লাল শাপলার বিল কেবল সৌন্দর্যের পরিচয়ই বহন করে না, জৈন্তিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পৌরাণিক আমলে নারী শাসিত রাজ্য ছিল এই জৈন্তাপুর। সৌন্দর্যের সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সম্মিলন এই চারটি বিল গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। লাল শাপলার বিলে আসা পর্যটকরা ঐতিহ্যের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারছেন। লাল শাপলার বিল সংরক্ষণে উপজেলা প্রশাসন কমিটি করে দিয়েছে। পর্যটন করপোরেশনেরও উচিত বিলের অবশিষ্ট জায়গা অন্তর্ভূক্ত করার দিকে নজর দেওয়া।
সুরক্ষা কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শুকুর, সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ, ইউপি সদস্য মো. মনসুর আহমদ, ফরিদ উদ্দিন, নুর আহমদ, সাব্বির আহমদ জানিয়েছেন, জৈন্তাপুর হয়ে জাফলং ঘুরতে যাওয়ার সময় পর্যটকরা লাল শাপলার বিলে ঘুরে যান। অনেকে কেবল লাল শাপলার বিলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। দিন কাটিয়ে দেন এখানেই।
এছাড়া প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওরে। তার মধ্যে বালিহাঁস, পাতিসরালি, পানকৌড়ি, নীলকণ্ঠী, সাদাবক, জলময়ূরসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখি দেখা যায় বলেও জানান তারা।
সারাবাংলা/এমও