‘রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, মানুষের কাজেই লাগছে’
২৭ অক্টোবর ২০২২ ১৩:৩৬
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা প্রশ্নটা করেন রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়? তাদের বলছি, রিজার্ভের টাকা গেল পায়রা বন্দরে, রিজার্ভের টাকা গেছে মানুষের খাদ্য কেনায়, সার কেনায়, মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য; এ টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি। এ টাকা মানুষের কাজেই লাগছে, মানুষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের আমদানিতে বিভিন্ন কাজে লাগছে।’
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পায়রা বন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
শুরুতে নিজস্ব অর্থায়নে পায়রা সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়নে অনেক ঝুঁকি-ঝামেলা পোহাতে হয়। সে কারণে আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে অর্থাৎ আমাদের বাংলাদেশে যে রিজার্ভ সেই রিজার্ভের টাকা দিয়ে একটা ফান্ড তৈরি করি। এই ফান্ডের নামটাও আমি নিজে দিয়েছিলাম, বাংলাদেশ ইনফ্রাকটাচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড। অর্থাৎ বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল— এটা তৈরি করি এবং আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে এই ফান্ডটা সৃষ্টি করি। সেই ফান্ড থেকেই আমরা কিন্তু এই বন্দরের ড্রেজিংয়ের কাজটা শুরু করেছি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। এখানে একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। আমাদের উপর একটা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল এবং সেটা কিন্তু প্রমাণ করতে পারেনি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ করবো। আল্লাহর রহমতে আমরা আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষম হয়েছি। আজ সারা বিশ্বকে আমরা দেখাতে পেরেছি বাংলাদেশের জনগণ; যেখানে জাতির পিতা বলে গিয়েছিলেন, কেউ দাবাযয়ে রাখতে পারবে না। ঠিকই কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না, আমরাও পারি। এটা আমরা আজ প্রমাণ করেছি।’
পায়রায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এসময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০৭টি বৈদেশিক বাণিজ্যিক জাহাজ এখন পর্যন্ত এই পায়রা বন্দরে এসেছে এবং এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৬১৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে। একইসঙ্গে রামনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হলেও প্রতিবছর মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং করে যেতে হবে বলেও জানান তিনি। এই বন্দরটা এক সময় গভীর সমুদ্র বন্দরে উন্নত করতে পারব বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল ফান্ড আমরা করেছি— এই টাকা দিয়েই যেহেতু প্রথম কাজটা শুরু করলাম, ভবিষ্যতেও এভাবে নিজেদের রিজার্ভের টাকায় আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি। সেটা আমরা বন্দরকে লোন দিয়েছি। অল্প সুদে। ঘরের টাকা ঘরেই থাকবে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবে এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা।’
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ না সারা বিশ্বে জ্বালানি সংকট চলছে। বাংলাদেশ এই সংকটের বাইরে নয়। একদিকে করোনা অতিমারির প্রভাব। এর ওপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা, রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সেই সঙ্গে স্যাংশন। যার ফলে আজ সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী, তারা কষ্টে আছে। কারা লাভবান হচ্ছে জানি না? হয়তো লাভবান হচ্ছেন যারা অস্ত্র ব্যবসা করেন বা অস্ত্র বানান। কিন্তু সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ না সারা বিশ্বব্যাপী মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।’
বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আবেদন থাকবে বিশ্ববাসীর কাছে যুদ্ধটা বন্ধ করতে হবে। স্যাংশন প্রত্যাহার করতে হবে। মানুষকে বাঁচার সুযোগ দিতে হবে। আমি মনে করি আমাদের উন্নত বিশ্বগুলি যারা যুদ্ধংদেহি ভাব নিয়ে পথে নেমেছেন তাদের কাছে আমার এই আবেদন থাকলো। আমি চাই মানুষগুলো বাঁচুক, সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়া হোক। এই অস্থিরতা বন্ধ হোক। যেন শান্তির সুবাতাস বয়ে যেতে পারে মানুষের জীবনমান উন্নত হতে পারে, সেটাই আমরা চাই।’
এসময় গণভবন প্রান্তে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, পটুয়াখালী কলাপাড়া পায়রা বন্দর প্রান্তে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বন্দর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও