ছাত্রদল নেতা ‘হত্যা’: ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
২৭ অক্টোবর ২০২২ ১৪:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাঁচবছর আগে চট্টগ্রামের রাউজানে ছাত্রদল নেতার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নালিশী মামলা দায়েরের আবেদন করা হয়েছে আদালতে। তবে মামলা গ্রহণ বা খারিজের বিষয়ে আদালত এখনও কোনো আদেশ দেননি।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁইয়ার আদালতে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান এই নালিশী মামলার আবেদন করেন।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে- চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমানে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা, রাউজান থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেফায়েত উল্লাহ ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ মো. জাভেদ।
২০১৭ সালের ৩০ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম ওরফে নুরুর লাশ রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানিয়েছিল, নুরুর মাথায় গুলি এবং সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। হাত-পা রশি দিয়ে ও শার্ট দিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় লাশ পাওয়া যায়। মুখের ভেতর ওড়না ঢোকানো পাওয়া যায়।
ওইদিন দুপুরে বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া ঠেলারঘাটে কর্ণফুলী নদীর তীরে গিয়ে নুরুর লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী, বোন ও ভগ্নিপতি। তখন পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছিলেন, ২৯ মার্চ রাত ১২টার দিকে সাদা পোশাকের কয়েকজন নুরুকে নগরীর চন্দনপুরা এলাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।
রাউজানের স্থানীয় রাজনীতিতে নুরু একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। সাকা চৌধুরীর ভাই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন, রাউজান থানার নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জাভেদ (শেখ জাভেদ) ছাত্রদল নেতা নুরুকে চন্দনপুরা এলাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে লাশ বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া ঠেলারঘাটে কর্ণফুলী নদীর তীরের পাশে ফেলে দেন।
তবে রাউজান থানা পুলিশ সেসময় চট্টগ্রাম নগরীতে তাদের কোনো অভিযান ছিল না এবং নুরুকে তারা আটক বা গ্রেফতার করেনি বলে জানিয়েছিল।
এ ঘটনায় পাঁচবছর পর দাখিল করা নালিশী মামলার আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা পরিকল্পিতভাবে নুরুল আলম নুরুকে বাসা থেকে তুলে রাউজানের নোয়াপাড়া কলেজ মাঠে নিয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত অমানুষিক নির্যাতন করে এবং পরে মাথায় গুলি করে হত্যা করে লাশ বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া ঠেলারঘাটে কর্ণফুলী নদীর তীরে ফেলে দেন।
মামলার আবেদনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৩ (১), ৫ (২), ৪ (১) (ক) ও ১৫ (২) ধারায় অপরাধ আমলে নেওয়ার আরজি জানিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন বাদী।
বাদীর আইনজীবী আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় সেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দলের যেসব নেতাকর্মী পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর শিকার হয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা দায়ের হবে। কেন্দ্রীয় সেলের নির্দেশে নুরুকে হত্যার ঘটনায় কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেছেন। আদালত আবেদনটি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।’
সারাবাংলা/আরডি/ইআ