বিরোধীদলীয় নেতার আসন নিয়ে দেবর-ভাবির কাড়াকাড়ি
২৭ অক্টোবর ২০২২ ১৭:৪৩
ঢাকা: জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার আসনে কে বসবেন— রওশন এরশাদ, নাকি জিএম কাদের? এমন প্রশ্ন জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাকর্মীদের মাঝে। বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে দলটির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের চলছে কাড়াকাড়ি। দেবর-ভাবির এই দ্বৈরথ এখন টক অব দ্য পার্টি।
গত ১ সেপ্টেম্বর জি এম কাদের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে দলের এমপিরা বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে জিএম কাদেরকেই বেছে নেন। বৈঠকের পর সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি চিঠি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ওই চিঠির স্বাক্ষরদাতা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ স্পিকারের কাছে দেওয়া চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেন। এ খবর জানার পরে জিএম কাদের ফের সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকে সকলের সম্মতি নিয়ে নিজেকে বিরোধীদলীয় নেতা মনোনীত করে নেন।
এছাড়া তিনি দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রত্যেকের কাছ থেকে এ বিষয়ে সম্মতি নেন, যাতে পরবর্তী সময়ে কেউ অস্বীকার করতে না পারেন। তার এই মনোনীত হওয়ার বিষয়টিও স্পিকারকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়। তবে স্পিকারের কাছ থেকে বিরোধীদলীয় নেতার পদের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সম্পর্কে সারাবাংলাকে জানান, বিরোধীদলীয় নেতার পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি পেন্ডিং রয়েছে।
অপরদিকে, সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা আইনগত দিকগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছেন। ওই কর্মকর্তার মতে, যেহেতু এখনও স্পিকারের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, তাই জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদে এখন পর্যন্ত রওশন এরশাদ বহাল রয়েছেন। এমনকি সংসদের বিরোধী দলের নেতার আসনে তিনিই বসবেন।
এদিকে, সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানিয়েছে, আসন্ন অধিবেশনে জিএম কাদের বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসবেন— এমন ইচ্ছাও নাকি প্রকাশ করেছেন তিনি।
এমন অবস্থায় নেতাকর্মীদের মাঝে প্রশ্ন জেগেছে, ৩০ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া অধিবেশনে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে কে বসবেন? তাদের মতে দেবর-ভাবির যুদ্ধ এবার সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছে। শুরু হয়েছে বসার আসন নিয়ে কাড়াকাড়ি। সংসদের আসন নিয়ে দেবর-ভাবির এই যুদ্ধের বিষয়টি সংসদে রেকর্ড হয়ে থাকছে। এতে করে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, স্পিকারের সিদ্ধান্তের আগে বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ারে যদি জিএম কাদের বসেন সেটি সংসদীয় রীতি ভঙ্গ হবে। সংসদে কথা বলতে গেলে তাকে ওই চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে উপনেতার আসনে বসেই মাইক নিতে হবে। তিনি বিরোধীদলীয় নেতার মাইক পাবেন না। ফ্লোর বা মাইক পাবেন উপনেতা হিসেবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ নাকি জিএম কাদের- এ সিদ্ধান্ত স্পিকার দেবেন। তখন আসন বণ্টনের বিষয়টি আসবে।’ তিনি বলেন, ‘সংসদীয় রীতিনীতি ও জাপার গঠনতন্ত্র দেখে সংসদের নিয়ম অনুযায়ী স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন।’
অপরদিকে, এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সংসদে বসার আসন কোনো বিষয় নয়। ম্যাডাম যেকোনো আসনে বসতে পারেন। আমরা তাকে সম্মান করি। তবে জি এম কাদের আমাদের কাছে বিরোধীদলীয় নেতা।’
বিরোধীদলীয় নেতার সংসদে তার আসনেই বসতে হয়— এমন নিয়মের প্রসঙ্গ তুললে চুন্নু বলেন, ‘ম্যাডাম যেখানে বসতে চান সেখানেই বসবেন। ম্যাডাম নন, জিএম কাদেরই সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএম/পিটিএম