Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাজ শেষ হলেও ২৯৪ প্রকল্পের প্রতিবেদন দিতে গড়িমসি

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ অক্টোবর ২০২২ ২৩:২০

ঢাকা: উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন (পিসিআর) জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে গড়িমসি করছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। নিয়ম অনুযায়ী পিসিআর জমা দিতে হয় আইএমইডিতে (বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ)। কিন্তু এই নিয়ম মানতে চান না অনেকেই। সারাবাংলার এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য।

এক্ষেত্রে শুধু এক অর্থবছরই (২০২১-২২) সময় মতো পিসিআর জমা পড়েনি ২৯৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের। ফলে প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এতে প্রকল্পের নানা দিক নিয়ে প্রান্তিক মূল্যায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতি ঢাকতেই কোন কোন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পিসিআর দিতে ভয় পান বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, পিসিআর নিয়ে গড়িমসি দিন দিন বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের নির্ধারিত সময়ে পিসিআর জমা দেওয়া হয়নি ১৩৬টি প্রকল্পের। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে নির্ধারিত সময়ে জমা পড়েনি ১২০টি প্রকল্পের পিসিআর। একাধিক বার তাগাদা দিয়েও এগুলো সময়ের মধ্যে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয় আইএমইডি।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই একটা অনিয়ম। নিয়ম না মানাটাই অনিয়ম। আমার মনে হয়, কেন পিসিআর আসছে না সেটি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। আইএমইডির উচিত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব পর্যায়ে বার বার তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠানো। কেননা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পিসিআর দেওয়ার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা তেমন কোনো বক্তব্য নেই। তবে এটুকু বলতে পারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর উচিত বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করা। কেননা পিসিআর’র গুরুত্ব অনেক। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে খতিয়ে দেখা হবে।’

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে কি না, প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে, ব্যয় কতটা বেড়েছে বা সময় কতটা বেড়েছে- এরকম নানাবিষয় সরেজমিন পরিদর্শন করে খতিয়ে দেখা হয়। পিসিআর না পলে সেটি করা সম্ভব হয় না। এজন্যই এই পিসিআর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমিসি করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের চরম দায়িত্ব অবহেলায়ও পিসিআর পেতে দেরি হয় বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পিসিআর দেওয়া না হলে সমাপ্ত প্রকল্পের সঠিক মূল্যায়ন করা যায় না। এটা মূলত প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব অবহেলা। এছাড়া তারা অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প শেষে হিসাব মেলাতে পারেন না। ফলে পিসিআর দিতে চান না। আমরা বার বার তাগাদা দিচ্ছি। কিন্তু তারা না শুনলে প্রশাসনিকভাবে আইএমইডির কিছু করার থাকে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইএমইডি চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই পিসিআর পাওয়া যায়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে যে ২৯৪টি প্রকল্পের পিসিআর সময় মতো আসেনি সেগুলোর মধ্যে আইএমইডির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সেক্টর-১ এর প্রকল্প রয়েছে ৩৮টি, সেক্টর-২ এর ৫৪টি, সেক্টর-৩ এর ৩৬টি, সেক্টর-৪ এর ৫টি, সেক্টর-৫ এর ৪০টি, সেক্টর-৬ এর ২৬টি, সেক্টর-৭ এর ৪১টি এবং সেক্টর-৮ এর ৫৪টি প্রকল্প রয়েছে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সময় মতো পিসিআর না পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অদক্ষতা। সেইসঙ্গে বলা যায়, আমাদের একটা ফরমেট আছে। প্রকল্প শেষে সেটি পূরণ করতে হয়। এটি খুব জটিল কিছু না হলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা পূরণ করতে ভয় পান। কেননা তারা ভাবে আমরাতো চলেই যাচ্ছি। পরে যা হয় হবে। ফলে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন না। এটা ঠিক নয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর উচিত পিসিআর জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প শেষ হলেও পিসিআর না দেওয়াটা আর্থিক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ।’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যেসব প্রকল্পের পিসিআর সময় মতো দেওয়া হয়নি সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ফরেন সার্ভিস একাডেমির (সুগন্ধা) অবকাঠামো গত উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প। এটি ২০১৬ সালের জুন মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। কিন্তু দুই বছরেও পিসিআর জমা দেওয়া হয়নি। এছাড়া বাংলাদেশ স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড প্রোডাক্টিভিটি (বি-সেপ) শীর্ষক প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে। বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এটির পিসিআর পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও আসেনি পিসিআর। মুন্সিগঞ্জ জেলা স্টেডিয়াম এবং বিদ্যমান সুইমিং পুলের অধিকতর উন্নয়নসহ ইনডোর স্টেডিয়াম ও টেনিস কোর্ট নির্মাণ প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। এটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও পিসিআর জমা পড়েনি।

সাবেক প্রকল্প পরিচালক প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢালাওভাবে গড়িমসির কথা বলা যায় না। কোনো কোনো কোন ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নানা কারণ থাকে। যেমন অনেক সময় প্রকল্প পরিচালক নেওয়া হয় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। এসব কারণে প্রকল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা অন্যত্র চলে যান। এমনকি কর্মকর্তারাও অস্থায়ী হওয়ায় চাকরি থেকে চলে যান। ফলে পরবর্তী সময়ে রেকর্ডপত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এর দায়দায়িত্ব তখন বর্তায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের ওপর। কিন্তু তারাতো পিসিআর দিতে পারে না।’

এসব সমস্যা সমাধানে প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাস আগে থেকেই পিসিআর তৈরির কাজ শুরু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। অথবা পিডিসহ কর্মরতদের পিসিআর দিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা দরকার বলেও জানান প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

আইএমইডি গড়িমসি পিসিআর প্রকল্প

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর