রংপুরে পরিবহন ধর্মঘট: যা বলছে বিএনপি-আ.লীগ-প্রশাসন
২৮ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৩০
রংপুর: রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের ঠিক আগমুহূর্তে প্রশাসনিক হয়রানি ও মহাসড়কে ৩ চাকার নছিমন-করিমনসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে জেলা মোটর মালিক সমিতি। এর আগে খুলনায় বিএনপির সমাবেশের আগেও সেখানে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল।
এই বিএনপির সমাবেশ, পরিবহন মালিকদের ধর্মঘট নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনায় রংপুর এখন সরগরম। বিএনপি নেতারা বলছেন, সমাবেশে বাধা দিতেই এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। যার পেছনে আওয়ামী লীগের ইন্ধন রয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ‘বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন একটি দল, তারা কিছু না পেলে শুধু আওয়ামী লীগ আর সরকারের উপর দোষ চাপায়।’
আর সমাবেশকে ঘিরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে পুলিশ, প্রশাসন সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, সমাবেশ ঘিরে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে।
এর আগে, জেলা মোটর মালিক সমিতির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুর জেলার সব রুটে বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার (২৯ অক্টোবর) রংপুরে বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজন করেছে দলটি। রংপুর কালেক্টরেট ঈদগা মাঠে এই গণসমাবেশ হবে।
তবে এই ধর্মঘট সমাবেশে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে বলছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপি নেতাদের দাবি, বিএনপির মহাসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতারা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছেন।
রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি এ কে এম মোজাম্মেল হক কোনো চাপের কথা অস্বীকার করেন। তিনি জানান, মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন করেছে। কিন্তু রংপুরের মহাসড়কগুলোতে এখনও নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এজন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে এসব যান চলাচল বন্ধের জন্য কয়েকটি সংগঠন মিলে সভা করে শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুরের সব রুটে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকার ধর্মঘটসহ কোনো বাধা দিয়েই গণসমাবেশে গণজোয়ার ঠেকাতে পারবে না। আমরা সমাবেশ সফল করব, আমাদের নেতাকর্মী সমর্থক সবাই এখন ২৯ অক্টোবরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।’
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছিলাম সরকারের পক্ষ থেকে বাধা আসতে পারে। কারণ এর আগেও সেটা হয়েছে। এ কারণে সমাবেশের দুই দিন আগে থেকেই মানুষজন রংপুরে আসতে শুরু করেছে। প্রয়োজনে মানুষজন হেঁটে, বাইসাইকেলে, ভ্যানে করে হলেও সমাবেশে এসে যোগ দেবেন।’
সমাবেশস্থল পরিদর্শন করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ খেলা দেখাবে কিন্তু তার আগেই আগামী শনিবার রংপুরের মহাসমাবেশে বিএনপি খেলা দেখাবে। এখানে ওই দিন স্মরণকালের বৃহত্তম মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে, সারা দেশের মানুষ বিএনপির সঙ্গে আছে। দেশের জনগণ অবিলম্বে এই অবৈধ সরকারের বিদায় চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির মহাসমাবেশগুলো বানচালের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। এরমধ্য দিয়ে বিএনপি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। পরিবহন ধর্মঘট ডেকে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার আর হুমকি দিয়ে মহাসমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা জনগণ প্রতিহত করবে।’
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘মোটর মালিক সমিতির ধর্মঘটের পেছনে সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো কিছুই নাই। বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন একটি দল, তারা কিছু না পেলে শুধু আওয়ামী লীগ আর সরকারের উপর দোষ চাপায়।’
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সাফি বলেন, ‘বিএনপি সুষ্ঠুভাবে কর্মসূচি করলে সহযোগিতা করবে আওয়ামী লীগ, কিন্তু দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড করলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।’
রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিএনপির এই সমাবেশ নিয়ে কোনো বাধা দিচ্ছি না। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা রয়েছে। রাজনৈতিক এই সমাবেশকে ঘিরে অন্য কোনো পরিকল্পনা থাকলে আমরা কঠোরভাবে সেটি দমন করব, আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
সারাবাংলা/এমও