বিএনপির সংলাপ ‘বাম বলয়ে’ নিয়ে যাচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ
২৯ অক্টোবর ২০২২ ১০:০০
ঢাকা: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপির চলমান সংলাপকে এবার বাম বলয়ে নিয়ে যাচ্ছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। সাত দলের সমন্বয়ে গঠিত এই মঞ্চ শনিবার (২৯ অক্টোবর) শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বাধীন ‘বাংলাদেশ জাসদ’-এর সঙ্গে সংলাপ করবে। আর এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বিএনপির চলমান সংলাপ ‘বাম বলয়ে’ প্রবেশ করবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে গত ২৪ মে নাগরিক ঐক্য, ২৭ মে লেবার পার্টি, ৩১ মে গণসংহতি আন্দোলন, ১ জুন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ২ জুন কল্যাণ পার্টি, ৭ জুন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ৮ জুন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ৯ জুন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ১২ জুন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী), ১৬ জুন কর্নেল (অব.) ডক্টর অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ১৯ জুন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ২১ জুলাই বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ২৪ জুলাই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), ২৬ জুলাই ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামিক পার্টি, ৩১ জুলাই বাংলাদেশ পিপলস লীগ, জাতীয় দল ও বাংলাদেশ ন্যাপ, ২ আগস্ট মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম এবং ৩ আগস্ট গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপ করে বিএনপি।
দ্বিতীয় দফায় গত ২ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ৩ অক্টোবর কর্নেল (অব.) ডক্টর অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ৬ অক্টোবর লেবার পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ১০ অক্টোবর জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও মুসলিম লীগ, ১৮ অক্টোবর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ২৩ অক্টোবর ন্যাপ ভাসানী ও পিপলস লীগের সঙ্গে সংলাপ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
২০ দলীয় জোটের শরিক এবং জোটের বাইরে থাকা অপেক্ষাকৃত ছোট এবং সাংগঠনিক দিক থেকে খর্ব শক্তির এসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দুই দফা সংলাপ করলেও বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শের পতাকাবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে পারেনি বিএনপি। এ ক্ষেত্রে বরাবরই সামনে এসে দাঁড়িয়েছে জামায়াত ইস্যু।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এই অচলায়তন ভাঙতে আ স ম আব্দুর রব নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হক নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন, ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু নেতৃত্বাধীন ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও হাসনাত কাইয়ুম নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ে গঠিত সাত দলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’কে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা ছিল বিএনপির।
জানা গেছে, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে বেরিয়ে আসা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকিকে দিয়ে বাম বলয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিএনপির সংলাপ। গণতন্ত্র মঞ্চের প্ল্যাটফর্মে শুরু হতে যাওয়া এ সংলাপে মূলত বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের দাবিসমূহ, এজেন্ডা, রূপরেখাগুলোই তুলে ধরা হবে।
সূত্রমতে, শনিবার (২৯ অক্টোবর) শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বাধীন ‘বাংলাদেশ জাসদ’কে দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সংলাপ শুরু হলেও তাদের মূল লক্ষ্য বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টিকে সরকারবিরোধী ‘যুগপৎ’ আন্দোনের সঙ্গে যুক্ত করা, যে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকবে বিএনপি।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সারাবাংলাকে বলেন, ‘শনিবার আমরা সংলাপ করব বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে। সংলাপ শুরুর পর এর পরিধি বাড়তে পারে।’
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিকদের সঙ্গে সংলাপ করব। এটা আমাদের স্বতন্ত্র উদ্যোগ।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে আমরা যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে একমত হয়েছি। সুতরাং অভিন্ন ইস্যুতে তারা যেসব উদ্যোগ নেবে, সেসব উদ্যোগে আমাদের নীতিগত সমর্থন আছে এবং থাকবে।’
সারাবাংলা/এজেড/এমও