Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লিঙ্গ পরিবর্তনের অযৌক্তিক সার্জারি বন্ধ করার দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ অক্টোবর ২০২২ ২২:২৫

ঢাকা: লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর অন্যতম একটি গোষ্ঠী আন্তঃলিঙ্গ ব্যক্তির জৈবিক বৈচিত্র্যময়তাকে রোগ হিসেবে বিবেচনা করে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে নারী বা পুরুষে রুপান্তরিত করা হয় যা অনেকসময়ই অপ্রয়োজনীয়। এসব অস্ত্রোপচার অনেকের জন্য শারীরিক নানা সমস্যা তৈরি করছে যা বন্ধ করতে হবে। এবং আন্তঃলিঙ্গ ব্যক্তিকে পরিচিতি দিতে হবে। ‘আন্তঃলিঙ্গ মানুষদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

সভার শেষে স্পেস ফাউন্ডেশন থেকে জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সরকারি এবং বেসরকারি নথিতে আন্তঃলিঙ্গকে লৈঙ্গিক পরিচয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি, তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপাচারের বন্ধ করার জোরালো দাবি জানানো হয়।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের সেমিনার কক্ষে ‘স্পেস- এ ফাউন্ডেশন ফর পিস অ্যান্ড কেয়ার’ সংগঠন এই গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে। ‘আন্তঃলিঙ্গ মানুষদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক ওই কর্মসূচির নেটওয়ার্কিং পার্টনার হিসেবে ছিল পসিবিলিটি প্লাটফর্ম।

আলোচ্য গোলটেবিলে আন্তঃলিঙ্গ জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মো. পারভেজ, নুরে আলম, পরী, মাইমুনা আক্তার প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকর্মী, উন্নয়নকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, নারীবাদী অ্যাকটিভিস্ট এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তারা জানান, অনেক সময় আন্তঃলিঙ্গ মানুষেরা অন্ডকোষ এবং যোনি উভয় নিয়েই জন্মগ্রহণ করেন। তখন পরিবার থেকে তাদের এই অস্ত্রোপাচার করে তাকে ‘পুরুষ’ কিংবা ‘নারী’ লিঙ্গে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের ফলে ছোটবেলায় যাকে পুরুষ লিঙ্গে পরিবর্তন করা হয়, বয়ঃসন্ধিকালে তার দেহে নারীসুলভতা প্রকাশ পায়। যার ফলশ্রুতিতে সমাজের বিভিন্ন স্থানে তাকে ভয়াবহ সব হয়রানির শিকার হতে হয়।

আন্তঃলিঙ্গ জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বিভিন্ন যৌন বৈশিষ্টের যেমন ভিন্ন ক্রোমাজোম প্যাটার্ন, গোনাড বা যৌনাঙ্গের যে কোনো একটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস অনুসারে, সাধারণ বাইনারি পুরুষ বা নারীর দেহের ধারণার সঙ্গে আন্তঃলিঙ্গ মানুষদের দেহের ধারণা খাপ খায় না। আন্তঃলিঙ্গ শব্দটি দিয়ে মূলত ভিন্ন ধরনের প্রকৃতিগত শারীরিক বৈশিষ্ট্যসমূহকে বোঝায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আন্তঃলিঙ্গ বৈশিষ্ট্যগুলো জন্মের সময় দৃশ্যমান হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে যৌবনের আগে তা স্পষ্ট দৃশ্যমান হয় না। কিছু ক্ষেত্রে ক্রোমজমনাল আন্তঃলিঙ্গ মানুষের ভিন্নতা শারীরিকভাবে দৃশ্যমান নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে একজন আন্তঃলিঙ্গীয় মানুষ হিজড়া সম্প্রদায়ের অন্তর্গত না হয়েও জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি ‘হিজড়া’ হিসেবে চিহ্নিত হন। তাছাড়া বাংলাদেশে ‘হিজড়া’কে লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও, আন্তঃলিঙ্গ মানুষের কোনো স্বীকৃতি নেই।

বিজ্ঞাপন

সভায় আন্তঃলিংঙ্গীয় মানুষেরা এ ‘পরিচয়ের স্বীকৃতি’ না পাওয়ার ফলে তাদের ব্যক্তিগত দুঃসহ অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেন। মাইমুনা আক্তার জানান, সরকারি এবং বেসরকারি নথিতে কেবল আন্তঃলিঙ্গীয় মানুষের স্বীকৃতি না থাকার কারণে তিনি কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না, এমনকি তাকে পাসপোর্ট দেওয়াও হচ্ছে না।

আন্তঃলিঙ্গীয় মানুষদের সবচেয়ে নির্মম অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই জোর করে পরিবার এবং সমাজের চাপে তাদেরকে লিঙ্গ অস্ত্রোপাচারের জন্য চিকিৎসকের কাছে দ্বারস্থ হতে হয়। পুরুষ বা নারীর শরীর বানানোর জন্য তাদেরকে অদরকারি এবং অযৌক্তিক লিঙ্গ সার্জারির মধ্য দিয়ে যেতে হয় যার ফলে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এমনকি অনেক শিশু এ ধরনের সার্জারিতে মারাও যায়।

নুরে আলম জানান, তাকে ছয়বার এই ধরনের অস্ত্রোপাচারের মধ্যে যেতে হয়েছে, কখনও নারী এবং কখনও পুরুষ বানানোর জন্য। এই অযৌক্তিক অস্ত্রোপাচার তার স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করেছে। তিনি এখন সহজভাবে হাঁটতে কিংবা গণপরিবহনে উঠতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, লিঙ্গ পরিবর্তনের এই অস্ত্রোপাচার তার জন্য অপ্রয়োজনীয় ছিল, তা বাদেই তিনি সুস্থ ছিলেন। কিন্তু শুধুমাত্র ছেলে বা মেয়ে বানানোর জন্য তাকে এই অস্ত্রোপাচার করিয়ে তার এই শারীরিক জটিলতাগুলো তৈরি করা হয়েছে।

বৈঠকে বক্তারা আরও জানান, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে হরহামেশাই এই ধরনের লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রোপাচার করা হচ্ছে যা একজন মানুষের ন্যুনতম মানবাধিকারকে লংঘন করছে। কিছু অস্ত্রোপাচার দরকারি হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমাজ নির্মিত ‘পুরুষ’ এবং ‘নারী’ পরিচয়ের খাপে ফেলতেই এই অস্ত্রোপাচারগুলো হয়। যদি আন্তঃলিঙ্গীয় মানুষের পরিচয়ের স্বীকৃতি এবং সমাজ এবং রাষ্ট্রে তাদের শারীরিক বৈচিত্র্যতাকে স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করা হতো, তাহলে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনীয় বিষয়টি ঘটত না বলে তারা মনে করেন।

আন্তঃলিঙ্গ অস্ত্রোপাচারের বিরোধিতা করে ১৯৯৬ সালের ২৬ অক্টোবর আমেরিকার বোস্টন শহরে আন্তঃলিঙ্গ অধিকার কর্মীরা জনসম্মুখে প্রতিবাদ সভা করেন। তাদের সেই সাহসী প্রতিবাদের স্মরণে এবং সম্মানার্থে ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ২৬ অক্টোবর আন্তঃলিঙ্গ সচেতনতা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। এ দিবসকে কেন্দ্র করে স্পেস আজকের গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

অস্ত্রোপচার আন্তঃলিঙ্গ লিঙ্গ হিজড়া

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর