‘আক্রমণ থেকে দেশ রক্ষার জন্য সক্ষমতা অর্জন করতে হবে’
৩০ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৪৫
ঢাকা: সর্বদা বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার সক্ষমতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবসময় আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। কিন্তু ভবিষ্যতে আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।’
রোববার (৩০ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে নৌবাহিনীতে ২টি টহল বিমান সংযোজন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাতে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সবসময় আমরা ধরে রাখতে পারি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ একদিকে মিয়ানমার, একদিকে ভারত, এ দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আমরা সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এক লাখ আঠারো হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার বিশাল সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হযয়েছে। যেহেতু আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা পেয়েছি আমাদের শক্তিশালী নৌবাহিনী দরকার, যেটা জাতির পিতারও স্বপ্ন ছিল, আমরা সেটাই করতে চাই।’
নৌবাহিনীতে যুক্ত হলো আরও ২টি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমুদ্রের তলদেশ থেকে শুরু করে সমুদ্র এবং আকাশ সবই যাতে সুরক্ষিত থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে আমাদের নৌ বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি।’
শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়তে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আধুনিক যুদ্ধজাহাজ, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম টহল বিমান এবং সাবমেরিনসহ আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নৌ-বহরে ‘বানৌজা নবযাত্রা’ ও ‘বানৌজা জয়যাত্রা’ নামক দুটি সাবমেরিন সংযোজনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফটের (এমপিএ) গুরুত্বের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের গভীর সমুদ্রে নজরদারি, উদ্ধার অভিযান ও অন্যান্য অপারেশনাল কার্যক্রমে এমপিএর কার্যকারিতা অপরিসীম। এই দুটি নতুন এমপিএ সংযোজনের মাধ্যমে নেভাল এভিয়েশনের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের যে জলসীমা, বিশেষ করে সমুদ্র সম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে ব্যবহার করতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
সমুদ্রসীমা সুরক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন দুযোর্গে নৌবাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে অনেক প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে, যা প্রশংসার দাবিদার।’
প্রসঙ্গত যে, দেশের সমুদ্রসীমা সুরক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নেভাল এভিয়েশনে সংযোজিত হলো আধুনিক আরও ২টি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট (এমপিএ)। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে এমপিএ ২টি সংযোজন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী নামফলক উন্মেচন করেন।
এর আগে, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মত ২টি এমপিএ নেভাল এভিয়েশনে সংযোজন করেন। এর মধ্য দিয়ে নৌবাহিনীর নেভাল এভিয়েশন এমপিএ স্কোয়াড্রনে মোট ৪টি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করলো।
আধুনিক সেন্সর ও মিশন ইকুইপমেন্ট সম্বলিত নতুন ২টি ডর্নিয়ার ২২৮ এনজি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২৩ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। নব সংযোজিত এমপিএ ২টি প্রায় ৫ ঘণ্টা একনাগাড়ে উড়তে পারবে। নতুন এমপিএ ২টিতে গভীর সমুদ্রে নজরদারী পরিচালনার জন্য যুক্ত রয়েছে সার্ভেইল্যান্স র্যাডার, ইলেক্ট্রা অপটিক ইনফ্রারেড ক্যামেরা, ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিঙ্ক ও সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ ডিটেকশন ফাইন্ডার।
এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত মিশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং জাহাজ ও সাবমেরিনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে এমপিএ দু’টিতে। এই এমপিএসমূহ কমান্ড প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেশের সমুদ্রসীমার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, সুনীল অর্থনীতির সুরক্ষায় যেকোনো ধরণের অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
সারাবাংলা/এনআর/এমও