ঢাকা: শুরু হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন। রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
অধিবেশনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য দলের এমপিরা যোগ দিয়েছেন। তবে সবার চোখ ছিল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের ও পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর ওপর।
এদিনের অধিবেশনে বিরোধীদলীয় উপনেতার আসনেই বসেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি। আর চিফ হুইপের আসনে বসেছেন মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। তবে তাদের মধ্যে চলছে রাগ-বিরাগ।
সংসদীয় দলের সভা শেষ করে বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে জিএম কাদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। তবে সেখানে আগে থেকেই চিফ হুইপের আসনে বসেছিলেন রাঙ্গাঁ। জিএম কাদেরের সঙ্গে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করে দলটির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বসেন রাঙ্গাঁর পাশের চেয়ারে। কিন্তু দুজন পাশাপাশি চেয়ারে বসলেও কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। এমনকি কেউ কারও মুখের দিকেও তাকাচ্ছেন না।
ঘড়ির কাঁটা ঠিক ৪টা ৩০মিনিটের অল্প কিছুক্ষণ আগে অধিবেশন কক্ষে আসেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪টা ৩৩ মিনিটে প্রবেশ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এদের আগেই বিরোধীদলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ নিজের আসনে বসেন।
অধিবেশন শুরুর পর একে একে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় রাঙ্গাঁকে একটি কাগজ ও পেন্সিল নিয়ে নেতাদের কাছে কিছু একটা বলতে দেখা যায়। প্রথমে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার কাছে কিছু একটা বলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ। মুখে কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সূচক জবাব দেন আবুল হোসেন। এরপর জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের কাছে একইভাবে কিছু বলতে চান রাঙ্গাঁ। তিনিও একইভাবে মাথা নেড়ে ‘না’ সূচক জবাব দেন। একইভাবে না করেন জাতীয় জাপারন মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।
সংসদে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের আসন বণ্টন অনুযায়ী প্রথম সারির প্রথম চেয়ারটি বিরোধীদলীয় নেতার। সেই আসন ফাঁকা রেখে পরের আসনে বসেন জিএম কাদের। তারর পাশে বসেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এর পরের আসনে বসেন কাজী ফিরোজ রশীদ। কাজী ফিরোজ রশিদ ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে কিছুক্ষণ কানে-মুখে কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় জিএম কাদের তার আসনে বসে শোকপ্রস্তাবসহ অন্যান্য কাগজপত্র দেখছিলেন। পেছনের আসনে বসে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁও একইরকম কাগজপত্র দেখছিলেন।
এদিকে, অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধীদলীয় উপনেতার কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য থাকলেও ছিলেন না চিফ হুইপ রাঙ্গাঁ। ওই সময় তিনি নিজের রুমে বসেছিলেন। এ সময় কথা হয় মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাকে দ্রুত লবির দিকে যেতে হবে। আসনে বসতে হবে। আজকের দিনটি আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু তারা আমাকে চিফ হুইপ পদ থেকে বহিষ্কার করেছে, গণমাধ্যমে এসেছে। তবে আমি এখনও চিফ হুইপ। তাই শোক প্রস্তাবের ওপর কারা বক্তব্য দেবেন সেই নামের তালিকাটা করতে হবে।’
তার এই কথার সূত্র ধরে ধারণা করা যায়, অধিবেশন কক্ষে জাপার এমপিরা প্রবেশ করার পর তাদের কাছে রাঙ্গাঁ বক্তব্য রাখার বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তালিকা দিয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে তিনিসহ জাপার একাধিক সংসদ সদস্য শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেছেন।
এদিকে, সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে জাপা মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদ থেকে বাদ দেয়। তবে সেই চিঠি স্পিকারের কাছে এখনও দেয়নি। অন্যদিকে, বেশ কিছুদিন আগে রওশন এরশাদকে তার পদ থেকে বাদ দিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছিল জাপার সংসদীয় দল। তবে স্পিকার সেই চিঠির জবাব এখনো দেননি।