Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিছু হটছেন রওশন, ২৬ নভেম্বর হচ্ছে না জাপার কাউন্সিল

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ অক্টোবর ২০২২ ১১:২৭

ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ে ক্ষণিকের জন্য পিছু হটেছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। আগামী ২৬ নভেম্বর ডাকা জাতীয় পার্টির কাউন্সিল আয়োজন থেকে সরে এসেছেন তিনি। কী হবে পরবর্তীতে এ নিয়ে চিন্তিত তিনি। বিরোধী দলীয় নেতার পদ রক্ষায় রওশন এরশাদ রোববার রাত থেকে দলীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলাপ-আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

রওশন এরশাদপন্থী নেতারা জানিয়েছেন, রাজনীতিক কৌশল হিসেবে বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় কাউন্সিল স্থগিত করেছেন। কাউন্সিল সম্পূর্ণ করার জন্য যে প্রস্তুতি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছিল, সে কমিটিতেও শিগগির নেতৃত্বের পরিবর্তন আসবে। সদস্য সচিব গোলাম মসীহসহ গুরুত্বপূর্ণ দুই একটি পদে আসবে নতুন মুখ। সেই নতুন মুখে থাকবে জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য।

রওশনপন্থী নেতাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রটি বলেছে, বেগম রওশনপন্থী অংশের আহ্বায়ক কমিটির মধ্যে জি এম কাদেরের গুপ্তচর প্রবেশ করেছে। তারা গোপনীয় খবর জি এম কাদেরের কাছে ফাঁস করে দিতেন। এছাড়া আহ্বায়ক কমিটিতে যেসব নেতৃত্ব রয়েছে সেই নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির দলীয় এমপিরা রাজনীতি করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এতে ২৬ নভেম্বর জাতীয় কাউন্সিলে ওই এমপিরা যোগদান থেকে বিরত থাকতে পারে। এসব নিয়েই রওশনপন্থী কমিটির মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন বিচক্ষণ পার্লামেন্টারিয়ান বেগম রওশন এরশাদকে আগামী ২৬ নভেম্বর ডাকা জাতীয় কাউন্সিল ‘ক্ষণিকের জন্য’ স্থগিত করার পরামর্শ দেন। তা না হলে জাতীয় সংসদ থেকে বিরোধী দলীয় নেতার পদটি তার হারাতে হতে পারে। এক্ষেত্রে দলীয় যেসব এমপি বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে রয়েছেন তারাও মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

এরই মধ্যে জি এম কাদেরের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বলা হয় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ না করলে জাতীয় পার্টি সংসদে যাবে না। এই হুমকি দেওয়ার কারণে বেগম রওশন এরশাদ নমনীয় হয়ে, তার ডাকা ২৬ নভেম্বর জাতীয় কাউন্সিল স্থগিত করার জন্য তার গ্রুপের নেতাদের নির্দেশ দেন। এরপরই বেগম রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে কাউন্সিল স্থগিত করার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

ভাঙন

সংশ্লিষ্টরা জানান, রওশনপন্থী নেতাদের সার্বিক বিষয় নিয়ে সোমবার (৩১ অক্টোবর) দুপরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে বেগম রওশন এরশাদ ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন। বেগম রওশন এরশাদের গত ৩০ তারিখ দেশে ফিরে সংসদ অধিবেশনের যোগদানের কথা ছিল। বিশেষ কারণে তিনি দেশে ফেরেননি, তবে শেষ দিনে তিনি অধিবেশনে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন রওশনপন্থী নেতারা।

এদিকে জিএম কাদের সোমবার বনানী কার্যালয় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। এছাড়া বিকেলে সংসদীয় দলের বৈঠকও করবেন। তবে তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দিবেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বেগম রওশন এরশাদের ডাকা জাতীয় সম্মেলন স্থগিত করার প্রসঙ্গে রওশনপন্থী নেতা এস এম এম আলম বলেন, ‘ক্ষণিকের সময়ের জন্য সম্মেলন স্থগিত করায় আমাদের ভালো হয়েছে। শিগগিরই জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০টি জেলায় কমিটি হয়েছে। আজ সোমবার বৈঠক করে সারাদেশে ২৫টি টিম সাংগঠনিক সফরে বের হবে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অর্থাৎ এক জানুয়ারি বড় ধরনের একটি সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

জাতীয় পার্টির যুগ্ন আহ্বায়ক (রওশনপন্থী) কাজী মামুন রশীদ জানান, অনেক জায়গায় আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এ সমস্ত কারণেই আমরা ক্ষণিকের জন্য কাউন্সিল স্থগিত করেছি।

অদৃশ্য কোনো শক্তির হাত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো অদৃশ্য শক্তি এখানে নেই। সম্মেলনে অঙ্গ সংগঠনগুলো গুছিয়ে আনতে সময় লাগছে। অদৃশ্য শক্তি বা আঁতাতের কোনো প্রশ্নই আসে না। সম্মেলন হবেই আজ অথবা কাল।’

রওশনপন্থী নেতা সাবেক ছাত্রনেতা ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘ম্যাডাম রওশন এরশাদ জাতীয় সম্মেলন স্থগিত করে ভালো করেছেন। সাংগঠনকে শক্তিশালী করতে আমরা সময় পাবো। জিএম কাদের জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা পদে থাকার জন্য চেষ্টা করে সফল হলেও, জাতীয় পার্টি ভাঙনের মুখ থেকে ঠেকাতে পারবেনা। তিনি মনোনয়ন বাণিজ্য, পদ বাণিজ্যসহ ও অগণতান্ত্রিক পন্থায় দলটি পরিচালনা করছেন। উনি একজন লোভী মানুষ। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেব উনাকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পাঁচ বার দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (জিএম কাদের) সবসময় বিএনপিঘেঁষা ছিলেন। এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে এবং ৯০ এর পরে তিনি কোনোদিন মাঠে ময়দানে জাতীয় পার্টির সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেননি। তিনি আগামী নির্বাচনের আগে একা হয়ে যাবেন।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও

জাতীয় পার্টি জাপার কাউন্সিল জিএম কাদের রওশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর