‘বাবরের ঘরে’ নাছির অতিথি, হামলায় পণ্ড ছাত্রলীগ নেতার শোকসভা
৩১ অক্টোবর ২০২২ ১৯:১৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীর এনায়েতবাজারে ২২ বছর আগে দলীয় কোন্দলে খুন হওয়া এক ছাত্রলীগ নেতার শোকসভা হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই শোকসভার আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন উপস্থিত থাকার কথা ছিল। আয়োজকরা এ হামলার জন্য যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারীদের দায়ী করেছেন।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর কোতোয়ালি থানার এনায়েতবাজার ওয়ার্ডের নন্দনকানন এক নম্বর গলিতে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ ইদ্রিস (৫৫)।
২০০০ সালে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ও ছাত্র সংসদের সদস্য নুর আহমেদ রাসেলকে দলীয় কোন্দলের জেরে গুলি করে খুন করা হয়। ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নন্দরকাননের এক নম্বর গলিতে এনায়েতবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শোকসভা, দোয়া মাহফিল ও এতিমদের খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে অতিথি হিসেবে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জামশেদুল আলম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ ইদ্রিস সভাস্থলে আসেন। প্রধান অতিথি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন তখনও পৌঁছাননি।
এ সময় নন্দনকানন এলাকার একদল তরুণ-যুবক সেখানে গিয়ে মঞ্চের ব্যানার খুলে ফেলে। মঞ্চ থেকে অতিথিদের জন্য রাখা চেয়ার ফেলে দেয়। দর্শক সারিতে রাখা চেয়ার-মাইক খুলে ভাংচুর করে। এতিমদের বিতরণের জন্য রাখা প্রায় ৩০০ প্যাকেট রান্না করা খাবার রাস্তায় ফেলে নষ্ট করা হয়। মোহাম্মদ ইদ্রিস বাধা দিতে গেলে তাকে প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে ইদ্রিসের মাথা ফেটে রক্ত ছরতে থাকে। আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী ‘অপমানবোধ’ করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। হামলাকারীরাও চলে যায়।
এদিকে, আহত ইদ্রিসকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার খবর পেয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীন আর সেখানে যাননি। পণ্ড হয়ে যায় শোকসভার সব আয়োজন।
জানতে চাইলে এনায়েতবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চসিক কাউন্সিলর সলিমুল্লাহ বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুর আহমেদ রাসেলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা একটা আয়োজন করেছিলাম। মূলত এলাকার ছেলে হিসেবে রাসেলের পরিবারের অনুরোধেই এই আয়োজন করা হয়েছিল। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীনকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল।’
‘সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর অনুষ্ঠান শুরুর আগ মুহূর্তে কয়েকজন ছেলে সেখানে গিয়ে হামলা করে সব পণ্ড করে দেয়। খবর পেয়ে আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছাই। তখন ছেলেগুলোকে দ্রুত চলে যেতে দেখি। তাদের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ইদ্রিস গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলার খবর পেয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেবও আর আসেননি।’
হামলাকারীদের পরিচয় জানতে চাইলে কাউন্সিলর বাচ্চু বলেন, ‘এলাকার মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ আছে। এর জেরে হামলা হয়েছে।’
শোকসভার আয়োজকদের পক্ষের রাহুল নামে এক ছাত্রলীগ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ভাইয়ের বাসা নন্দনকানন এলাকায়। এখানে উনার প্রভাব আছে। উনার এলাকায় আ জ ম নাছির ভাই এসে সভা করবেন, সেটা উনি মানতে পারেননি। সেজন্য উনার নির্দেশে উনার অনুসারী ছেলেরা হামলা করেছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিবুপ্রসাদ চৌধুরী হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য শিবু প্রসাদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। হামলার সময় আমি এলাকায়ও ছিলাম না। হামলার কথা আমি পরে শুনেছি। এটা এলাকাভিত্তিক বিরোধে হয়েছে। এখন শুধু শুধু রাজনৈতিক রং লাগানো হচ্ছে।’
জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার শোকসভা ছিল। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেবকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। শুনেছি, সেখানে হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর সাহেবের লোকজন গিয়ে কয়েকটা চেয়ার ভাংচুর করেছেন। এ ঘটনার পর সাবেক মেয়র আর সেখানে যাননি। স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে সলিমুল্লাহ বাচ্চু সাহেব উভয়পক্ষকে ডেকে বৈঠক করে সমাধান করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর এনায়েতবাজার, নন্দনকানন, সিআরবিসহ আশপাশের এলাকা প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী নন্দনকানন এলাকার বাসিন্দা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের কর্মীদের বড় অংশ এসব এলাকার। এনায়েতবাজার ওয়ার্ড সম্মেলনকে সামনে রেখে সেখানে আ জ ম নাছির উদ্দীনপন্থি একটি বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। মূলত শোকসভার মাধ্যমে সেই বলয়ের সামনে আসার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম
আ জ ম নাছির উদ্দীন আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম শোকসভা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর