Monday 30 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশেই হচ্ছে নানা রোগের মহৌষধ ননী ফলের বাণিজ্যিক চাষ

মহিউদ্দিন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ নভেম্বর ২০২২ ১২:১৭

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে বাণিজ্যিকভাবে আবাদ শুরু হয়েছে ননী ফলের। নানা রোগের প্রতিরোধক এই ফল গাছ চাষ করে প্রশংসা পাচ্ছেন কৃষক বাবুল হোসেন। ‘ননী ফলের’ বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘মরিন্ডাসিট্রিফলিয়া’। এটি একটি আফ্রিকান ফল। তবে এই গাছটি ক্রান্তীয় অঞ্চলে অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশেও জন্মায়।

কৃষক বাবুল হোসেন কালিহাতী উপজেলার পৌংলী এলাকায় এই গাছ রোপণ করেছেন। তার রোপণ করা গাছের মধ্যে এ বছর ৭০টি গাছে ফল ধরেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, এই ননী ফল গাছে বারো মাস ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে এই ফল বাজারে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয়ে থাকে। এর চারাও বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। ননী গাছের ফল ও পাতা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির এক মহৌষধ। যদিও এখন পর্যন্ত অনেকের কাছেই এই ফলটি অপরিচিত। তবে বর্তমানে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধ নির্মাণকারী সংস্থা ‘ননী ফলের’ জুস বোতল ভর্তি করে বাজারজাত করছেন। এই ফল ব্লান্ট করে খাওয়া যায়।

সরেজমিনে জানা যায়, জেলার কালিহাতী উপজেলায় এলেঙ্গা পৌরসভার পৌংলি এলাকায় ২ বছর আগে ১ বিঘা জায়গা নিয়ে কিছু চারা কিনে বাগান তৈরি করেন বাবুল হোসেন। তিনি তার পুরো জায়গা টিন দিয়ে বেড়া তৈরি করে দিয়েছেন। তার প্রস্তুত করা জায়গায় একপাশে ননী গাছের নার্সারি তৈরি করা হয়েছে। বাকি অংশে ৬ ফুট দুরত্ব রেখে গাছ রোপণ করা হয়।

ছোট-বড় মিলিয়ে তার কাছে ২৮০টি গাছ আছে। অনেকেই কৌতুহল নিয়ে তার এই ওষধি বাগান দেখতে আসেন। দেখতে এসে গাছের চারা ও ফল কিনে নিয়ে যান।

উদ্যোক্তা বাবুল হোসেন বলেন, ‘আমি অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পাড়ি এই ননী ফল গাছের গুণাগুণের কথা। তারপর থেকেই আমি বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে ৫০টি চারা কিনে আনি। সেখান থেকেই আমার বাগান। এই ফলের সম্পর্কে মানুষ খুব একটা জানে না। তাই টাঙ্গাইলে তেমন বিক্রি হয় না। তবে লোকমুখে শুনে কিছু লোকজন আসে। এই ফলের অনেক গুণ থাকায় এই এলাকাসহ আশেপাশের এলাকা থেকে অনেকেই দেখতে আসে আমার বাগান। আমি মনে করি এই ফলের গুণ সম্পর্কে মানুষ জানতে পারলে প্রচুর চাহিদা বাড়বে।’

বিজ্ঞাপন

বাগান দেখতে আসা স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি এই ফলের নাম আগে কখনও শুনিনি। অনলাইনে জানতে পারি এই ফল ও গাছের পাতা গ্যাস্টিক ও চর্ম রোগের কাজ করে, তাই আগ্রহ নিয়ে বাবুল হোসেনের বাগান দেখতে এসেছি। যাওয়ার সময় একটা গাছ ও কিছু ফল কিনে নিয়ে যাবো।’

মীর আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি পাশের এলাকা থেকে এসেছি। আমি এই ফলের সম্পর্কে জেনেছি। এই ফল এলার্জি ও হাড়ের জয়েন্টের ব্যাথায় খুব উপকারী। তাই ওনার বাগানে এসেছি ফল নিয়ে যেতে।’

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আহ্সানুল বাসার বলেন, ‘বাবুল হোসেন নামের এক কৃষক ভালো উদ্যোক্তা। তার আবাদ করা ননী ফল গাছে এবার ফল ধরেছে। এই ফল বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এই ফল খাওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষের মধ্যে অনেক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারাও এগুলো কালেকশন করে খাচ্ছে।’

আর গুণাগুনের দিক থেকে আমরা জানতে পেরেছি এই ফল ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। পুরাতন বাতের ব্যাথা সারাতে এই গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে ভেজষ গাছ কমে যাচ্ছে। আমাদের দেহের জন্য ও প্রকৃতিকভাবেও ভেজষ গাছ লাগানো দরকার। তাই ভেজষ উদ্ভিদে বাবুল হোসেনের মতো উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছে। আর বাবুল হোসেনের মতো আরও অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হোক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তাদের সহযোগিতা করবে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/এমও

ননী ফল বাণিজ্যিক চাষ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর