‘এমপিদের এলাকামুখী হতে হবে, জনপ্রিয়রাই পাবেন নৌকা’
৩ নভেম্বর ২০২২ ০০:১৬
ঢাকা: আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারণা তুলে ধরতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য এমপিদের এলাকামুখী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। তাই এখন থেকেই মানুষের কাছে ছুটে যেতে হবে। ভোটের সময় যেভাবে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট চেয়েছেন, সেভাবে এখন সেবা দেবেন। মানুষের কাছে যিনি জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য তাকেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে।
বুধবার (২ নভেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদ ভবনের লেভেল-৯ এ সরকার দলীয় সভাকক্ষে সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন। সভায় কয়েকজন এমপি বক্তব্য দেন। এ সময় মমতাজ বেগম একটি গানের কয়েক লাইনও গেয়ে শোনান এবং বক্তব্য দেন।
সভায় বিগত বিএনপি-জামায়াতের অপশাসন-দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেষ হাসিনা। পাশাপাশি বিএনপির অপপ্রচারের জবাব দিতে এমপিদের সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ড বাড়ানোর তাগিদ দেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি। এসব অপপ্রচার রুখতে প্রত্যেক জনপ্রতিনিধিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী যেকোনো অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা মোকাবিলায় সরকারের যে সাফল্য সেটি তুলে ধরতে এমপিদের নির্দেশ দেন। বর্তমান যে বৈশ্বিক সংকট রয়েছে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলেও এমপিদের আশ্বস্ত করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে লোন নিয়ে যেভাবেই হোক এই সংকট কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। তাই মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতিকে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক হুইপ বলেন, ‘আপনি আগে নির্বাচনের সময় আমাদের এলাকায় যেতেন। অনেকদিন হলো এলাকায় যান না। মানুষ আপনাকে একটু কাছ থেকে দেখতে চায়। আপনাকে কাছে পেলে মানুষ আত্মবিশ্বাস পায়। তাই আমার এলাকায় যদি একটু সময় দিতেন একটি জনসভায়।’
সভায় অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্য জানান, সভায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিরোধী দলের আন্দোলন ও জেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় দলীয় এমপি যারা স্থানীয় সরকার পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছে, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছে এবং নৌকা মার্কার প্রার্থীকে পরাজিত করেছে, তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি আগামী নির্বাচনে তাদের দলের মনোনয়ন না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সভায় বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আলোচনা উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা সমাবেশ করছে করুক। গণতান্ত্রিক উপায়ে সভা-সমাবেশ আমরা সমর্থন করি। তাদের তো আমরা সমাবেশ করতে বাধা দিচ্ছি না। সভা-সমাবেশ করতে পারে। তাদের সমাবেশ করার অধিকার আছে। কিন্ত আগের মতো যদি আবার সন্ত্রাস করে, জ্বালাও-পোড়াও করে, তবে ছাড় দেওয়া হবে না। কঠিনভাবে তাদের দমন করা হবে। তাদের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না।’
আওয়ামী লীগ সরকার যে কাজগুলো করেছে সেটা মানুষের কাছে ঠিকমতো তুলে ধরলে এবং নিজেরা ঠিক মতো কাজ করলে বিএনপির আন্দোলন হালে পানি পাবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া যে সকল সংসদ সদস্য টেন্ডার বাণিজ্য করেন এবং দলের মধ্যে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে অন্যদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন তাদেরকেও সতর্ক করা হয় বৈঠকে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সভাপতি মনে করেন আগামী নির্বাচন আর যেন বিতর্কিত না হয়। তাই মানুষের কাছে যিনি জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য তাকেই আগামী নির্বাচনের প্রার্থী করা হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা হলো। গত ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর দলটির সংসদীয় দলের কোনো সভা হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ অধিবেশন চললেও তা ছিল সংক্ষিপ্ত। করোনা পরবর্তী এই সভায় দলীয় সংসদ সদস্যরা করোনা পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর দূঢ় নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং তাকে ধন্যবাদ জানান।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম