Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিদিন ভোলা থেকে ঢাকায় আসবে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ নভেম্বর ২০২২ ১০:০০

ঢাকা: দ্বীপ জেলা ভোলায় যে কয়টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে, সেগুলোর বর্তমান দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৩০ থেকে ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলছে, স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরেও ৭০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অব্যবহৃত থেকে যায়। যা পাইপলাইন না থাকার কারণে ভোলার বাইরে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার দেশজুড়ে জ্বালানি সংকট ঠেকাতে ভোলার এই প্রাকৃতিক গ্যাসকে সিএনজিতে (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) রূপান্তরিত করে তা দেশের শিল্পখাতে সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা।

বিজ্ঞাপন

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। সে হিসেবে প্রতিদিন গ্যাসের ঘাটতি থাকছে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এদিকে গ্যাসের অভাবে শিল্প কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিদিন লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে খোলা বাজার থেকে এলএনজি আমদানিও বন্ধ রেখেছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

পেট্রোবাংলা বলছে, শিল্প খাতের ঘাটতি মেটাতেই ভোলার গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলন করা উদ্বৃত্ত গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। আর এই প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে শুরু হবে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে। সেজন্য পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সে কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহীও এই উদ্যোগের কথা কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ভোলায় কিছু গ্যাস রয়েছে, সেগুলো আমরা সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকায় নিয়ে আসবো।’

সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘উদ্যোগ ভালো। আমরা তো আগে থেকেই এ বিষয়ে জোর দিচ্ছিলাম। বার বার বলেছি, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়ানো হোক। সরকার শেষ পর্যন্ত এ পথেই হাঁটলো তবে সঠিক সময়ে না।’

তবে ভোলা থেকে গ্যাস সিলিন্ডারে করে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াটি চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি ছাতক গ্যাস ক্ষেত্রে ফের অনুসন্ধান চালানোরও পরামর্শ দিয়েছেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।

এদিকে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকায় আনা অনেক চ্যালেঞ্জের বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। জানা গেছে, এ উদ্দেশ্যে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তারা পর্যালোচনা করছেন, ভোলা থেকে সিএনজিতে রূপান্তর করে সিলিন্ডারে করে গ্যাস আনতে হলে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিৎ, তার পরিবহন কী ধরনের হতে পারে, সেখানে যদি কনটেইনার ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটা কি সড়ক পথে নাকি নৌপথে আনা হবে। সেখানে খরচ কেমন হতে পারে আবার সেটি কতটা নিরাপদ হবে। সেসব বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, ‘চ্যালেঞ্জের তো বটেই। তবে সে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েই আমাদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। ভোলার গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে বর্তমানে যে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে সেখান থেকে ৭০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস আমরা ঢাকায় নিয়ে আসবো। বর্তমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সিএনজিতে রূপান্তর করে ভোলা থেকে গ্যস এনে তা শিল্প খাতে সরবরাহের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে ভোলার দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার। সেখান থেকে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের দূরত্ব আরও ২৫ কিলোমিটার। ১৯৯৫ সালে প্রথম গ্যাসের আবিস্কার হয় এখানে। এখানকার উত্তোলন করা গ্যাস এখন ব্যবহার করা হয় দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ছোট পরিসরের কয়েকটি কারখানায়। যে কারণে এখানকার গ্যাস অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। এদিকে বিশ্ব জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কারখানাগুলো সংকটে পড়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর