‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদাকে ফের জেলে পাঠিয়ে দেব’
৩ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৪৪
ঢাকা: বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আবার তাদের নেত্রী দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরও রক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীববিক্রম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ-উত্তরের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, শেখ বজলুর রহমান।
সভা সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সভার শুরুতে স্বাধীনতা সংগ্রাম আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বিএনপির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি অপরাধ করার পরে সেই অপরাধকে অন্যের ঘাড়ে চাপানোর এই ট্যাকটিসটাও তারা খুব ভালোভাবে জানে। কাজেই এরা এভাবেই মানুষকে হত্যা, মানুষের ওপর অত্যাচার; হত্যা করা খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে অপারেশন ক্লিনহার্ট শুরু করে। এ অপারেশনের নামে আমাদের যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে যে নির্মম অত্যাচার করেছে, সে অত্যাচারে কত মানুষ নিহত হয়েছে?’
বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম অত্যাচারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা শুধু দেশটাকেই ধ্বংস করেনি। এরা একে এ রাজনীতিটাকে ধ্বংস করেছে। আজকে তাদের অবস্থাটা কী? আমরা ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এলাম। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে খুনিদের বিচার শুরু করলাম। যখন খুনিদের বিচারের রায় দেবে, ৮ নভেম্বর রায়ের দিন খালেদা জিয়া হরতাল ডাকলেন।’
‘গোলাম রসুল সাহেব ছিলেন ওই মামলার বিচারক। তিনি খুব সাহসী ছিলেন। রায় ঘোষণার দিন গেলে এবং রায় দিলেন। তাকে যেতে বাধা দিয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়েছে। তাদের বাড়িতে মেয়েদের হুমকি দিয়েছে। তারপরও কিন্তু তিনি খুনিদের বিরুদ্ধে রায় দিলেন। এই যে খুনিদের বাঁচাতে তাদের যে প্রচেষ্টা এতে কী প্রমাণ হয়? এতে কি প্রমাণ হয় না যে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। খালেদা জিয়া তা ভালোভাবে জানেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে একজন আসামি খায়রুজ্জামানকে প্রমোশন দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেয়। তাকে মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার করে পাঠায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশে পাশা মৃত্যুবরণ করে। খুনিদের প্রতি খালেদা জিয়ার এতই দরদ। সেই খুনি পাশা মারা গেছে, মৃত ব্যক্তিকে খালেদা জিয়া প্রমোশন দেন এবং তার সমস্ত ভাতা সবকিছু তার পরিবারকে দেয়। তাহলে কী করে অস্বীকার করবে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত নন। ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত নন, কীভাবে অস্বীকার করবে। একইভাবে রশিদ-ফারুক; এদের সবাইকে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় খালেদা জিয়া আর তার বড় ছেলে তারেক জড়িত এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
পরে সংসদে গ্রেনেড হামলা নিয়ে আলোচনা করতে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘আমি ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে গিয়ে হামলা করার এক্সপার্ট হয়ে গিয়েছিলাম- এই তো খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল।’
বিএনপির আমলে সিআরআই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পার্টির কাজও করতে দেবে না। এই হলো খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রের নমুনা। আমাদের সমস্ত কিছু তারা নিয়ে চলে গেল। যদিও মূল কম্পিউটারে আমাদের যে তথ্যগুলো ছিল তা বাঁচাতে পেরেছিলাম। আমি খবর পাওয়ার পর সেই কম্পিউটার সরিয়ে নিই।’
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা অত্যাচার করেছে। আমরা তো এর প্রতিশোধ নিতে যাইনি। যা করার আমরা আইনগতভাবে করেছি। খুনিদের বিচার করেছি। সেই খুনিদের তারা রক্ষা করেছে। আজকে তাদের কী অবস্থা? আজকে দেখি, তারা বলে গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। যে দলের জন্ম মিলিটারি ডিটেকটরের পকেট থেকে, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী তারা গণতন্ত্র উদ্ধার কীভাবে করবে? আবার কিছু লোক তাদের সঙ্গে তাল মেলায়, এদের জ্ঞানবুদ্ধি কোথায় থাকে?’
বিএনপির নেতৃত্ব কোথায় প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি লাফালাফি করে, তাদের নেতা কই? দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। অর্থ্যাৎ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা খেয়ে ফেলেছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে মোটা অংকের টাকা এসেছি। একটি টাকাও এতিমরা পাইনি বা ট্রাস্টে জমা হয়নি। সব টাকা খালেদা জিয়া নিজের অ্যাকাউন্টে রাখেন। তার বিরুদ্ধে মামলা তো আমরা দিইনি, মামলা দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক থেকে নিয়ে এসে ফখরুদ্দিনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর খালেদা জিয়াই করেছিল। তার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। সেনাবাহিনীর ৯ জন মেজর জেনারেলকে ডিঙিয়ে জেনারেল মঈনকে সেনাপ্রধান করেছিল খালেদা জিয়াই। তারই প্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন তো তাদেরই লোক। তাদেরই প্রিয় লোকগুলো ক্ষমতায় ছিল। তাদের দেওয়া মামলা ছিল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। সেই মামলায় সাজা পেয়েছেন খালেদা জিয়া।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার দশ বছর জেল হয়। তিনি অসুস্থ, বয়স্ক মানুষ। তার বোন ভাই, বোনের জামাই আমার কাছে এসেছে, আবেদন করেছে; আমরা সাজাটা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকার সুযোগ দিয়েছি। মানবিক কারণেই দিয়েছি।’
এ সময় আওয়ামী লীগের উপস্থিত নেতাকর্মীরা নির্বাহী আদেশের বিরোধিতা করে সমস্বরে আওয়াজ তোলেন। এতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে, যদি ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করে, বিএনপি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব। কোনো চিন্তা নেই।’
জেল হত্যা দিবস পালন উপলক্ষে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে তিনি সরাসরি সকাল সাড়ে ৭টার পর বনানী কবরস্থানে জাতীয় নেতাসহ ১৫ আগস্ট নিহতদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর কলঙ্কজনক অধ্যায় ও কালো ছায়ার দিন ৩ নভেম্বর। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমগ্র বাঙালি জাতির সঙ্গে সশ্রদ্ধচিত্তে মর্যাদা ও বেদনার সঙ্গে শোকাবহ দিবসটিকে স্মরণ করে।
সারাবাংলা/এনআর/একে