‘যদি একটা মানুষের গায়ে হাত দেয় আমরা ছাড়ব না’
৩ নভেম্বর ২০২২ ২২:৩৪
ঢাকা: বিএনপির উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবৈধ দলগুলো খুবই লাফালাফি করে। খুব ভালো কথা। আমরা বলেছি, শান্তিপূর্ণ মিটিং করেন, আমরা কিচ্ছু বলব না। কিন্তু লাঠিসোটা নিয়ে এসে ভাবসাব দেখাবেন না। তারা যদি একটা মানুষের গায়ে হাত দেয় আমরা ছাড়ব না।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বরেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন বলি তার ছেলের গুণের কথা। খালেদা জিয়ার আমলে কয়টা সরকার ছিল বাংলাদেশে? প্রাইম মিনিস্টার অফিসে একটা, আর হাওয়া ভবনে আরেকটা। কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। হাওয়া ভবনে টাকা না দিলে কেউ কোনো ব্যবসা করতে পারতেন না। এক দফা হাওয়া ভবনকে দিতে হতো, আরেক দফা পিএমওতে দিতে হবে খালেদা জিয়ার কাছে। আবার খালেদা জিয়ার নিজস্ব লোক আলু-ফালু কিছু ছিল। আর তারেক জিয়ার ছিল মামুন-কোকো কী কী যেন। আরও গোর্কি-টর্কি কারা কারা ছিল। এদের হাতে বুঝিয়ে দিতে হবে এটা খালেদা জিয়ার নির্দেশ।’
তিনি বলেন, ‘হাওয়া ভবনের খাওয়া খেয়েই কুলাতে পারেনি না, আবার প্রাইম মিনিস্টিার অফিসে উন্নয়ন উইংস করেছে। উন্নয়ন উইং মানে দেশের উন্নয়ন না, ঘুষ-দুর্নীতির উন্নয়ন। সেখানেও আবার দিতে হবে। সব জায়গায় দিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে হতো। অনেক ব্যবসায়ী তখন বলতেন, একটা কাজ করতে গিয়ে যে পরিমাণ টাকা দিতে হয়, এরপরে কাজটা করব কী দিয়ে? এটাই ছিল ব্যবসায়ীদের অবস্থা।’
এফবিআই তদন্তে খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর অর্থপাচারের তথ্য উঠে আসার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন বিএনপি এত লম্ফজম্ফ করে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের দুই নেতার দু’জনেই তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বিএনপির গঠনতন্ত্রে আছে, কেউ যদি সাজাপ্রাপ্ত হয় সে দলের চেয়ারম্যান হতে পারবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যানশিপ কাকে দিয়েছে? দিয়েছে তারেকের হাতে। সেও তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা যে এত লাফাচ্ছ, তোমাদের মাথা কই? সবই তো দুর্নীতিগ্রস্থ এবং পলাতক আসামি। হ্যাঁ, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আজ সেই সুযোগটা পাচ্ছে তারা। এটা বাস্তব কথা। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত আসামি যারা দুর্নীতি, লুটপাট, হামলা করেছে- তারা যদি এই দেশের ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের অবস্থাটা কি দাঁড়াবে? সেটা কি একবার ভেবে দেখেছে এদেশের মানুষ?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ অন্তত কিছু পায়। কারণ আওয়ামী লীগের চিন্তাই হচ্ছে, এদেশের তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।’ এ সময় তিনি দারিদ্র্যের হার কমানো, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক খাতে তার সরকারের বিভিন্ন সাফল্য ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন।
বিএনপির নীতি হচ্ছে ভিক্ষা করে চলা- এমনটা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে। এই মাটি-মানুষ দিয়েই আমরা উৎপাদন বাড়াব, নিজেরা মর্যাদা নিয়ে চলব। আমরা আমাদের ফসল ফলাব। আমরা আমাদের খাদ্য খাব। আমরা আমাদের মতো চলব। আওয়ামী লীগ সেই নীতিতেই বিশ্বাস করে।’ কোডিভ-১৯ মহামারির কারণে দেশের উন্নয়নের ধারা ব্যহত হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার ধাক্কাটা তো আমাদের উপরেও এসে পড়ে। এটা তো খুবই স্বাভাবিক। বর্তমানে আমাদের সারের দাম, তেলের দাম বেড়ে গেছে। ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে গেছে। খাদ্য-পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। পরিবহন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। যুদ্ধের জন্য সেগুলো আসতে পারে না। তারপরও পৃথিবীর যেখানেই পাাওয়া যায় সেখান থেকেই খাদ্য-পণ্য, সার, তেল আমরা কিনছি। আমরা ফসল উৎপাদনে যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছি। এ কারণে দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে এক ইঞ্চি জমি ফেলে না রেখে চাষাবাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষকে বাঁচানো, মানুষের সেবা করাটাই তো আওয়ামী লীগের কাজ। আমরা তো সেবক হিসাবে আসি। তাই আমরা দিতে পেরেছি। আজ যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকতো, কি হতো? লাশের পর লাশ পড়ে থাকত। ভ্যাকসিন তো দূরের কথা, ওই ভ্যাকসিন কিনতে গিয়ে হাওয়া ভবনে কত টাকা হাওয়া হয়ে যেত তার ঠিক নাই। মানুষ না খেয়ে মারা যেত। এমন কোনো শ্রেণি-পেশা নেই যাদের আমি আর্থিক সহায়তা দেইনি। সরকারি কোষাগার থেকে, প্রাইম মিনিস্টার অফিস থেকে এবং আমি ব্যক্তিগত জোগাড় করে মানুষকে দিয়েছি। আমার দেশের একটা মানুষও যেন কষ্ট না পায়। তারা যেন ভালো থাকে।’ এ সময় করোনা মহামারিতে মানুষের পাশে সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের আন্দোলন মানে জ্বালাও-পোড়াও। তাদের আন্দোলন মানে অগ্নিসন্ত্রাস। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে কি তাণ্ডব তারা করেছে সারা বাংলাদেশে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর- সেটাই তারা প্রমাণ করেছে।’ তৎকালীন বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে হতাহতসহ ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ-উত্তরের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, শেখ বজলুর রহমান। সভা সঞ্চালনা করেন- দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
এর আগে, দিবসটি পালন উপলক্ষে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে তিনি সরাসরি সকাল সাড়ে সাতটার পর বনানী কবরস্থানে জাতীয় নেতাসহ ১৫ আগস্ট নিহতদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর কলঙ্কজনক অধ্যায় ও কালো ছায়ার দিন ৩ নভেম্বর। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমগ্র বাঙালি জাতির সঙ্গে সশ্রদ্ধচিত্তে যথাযথ মর্যাদা ও বেদনার সঙ্গে শোকাবহ এই দিনটিকে স্মরণ করে।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম