ইমরান-সেনা দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে
৫ নভেম্বর ২০২২ ০৯:১৩
ঢাকা: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার উপর হামলার জন্য সেদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জ্যৈষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) পাঞ্জাবের একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি তাদের অভিযুক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফসহ সরকারের এসব কর্মকর্তার পদত্যাগও দাবি করেছেন ইমরান খান।
তবে ইমরান খানের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য বলে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আন্তঃসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর)। সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা থেকে একটি বিবৃতিতে ইমরান খানকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, ‘প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা সৈনিকদের মানহানি করার জন্য কাউকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে না।’
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইমরান খান ওয়াজিরাবাদে তার উপর প্রাণঘাতী হামলার বর্ণনা দেন। তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে তার বাহিনীর ‘দুষ্কৃতিকারীদের’ জবাবদিহিতার আওতায় আনার অনুরোধ জানান।
ইমরানের ভাষণের কয়েক ঘণ্টা পর আইএসপিআর ওই বিবৃতিতে জারি করে। এতে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, এবং বিশেষ করে একজন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পিটিআই চেয়ারম্যানের ভিত্তিহীন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য এবং অযাচিত।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি অত্যন্ত পেশাদার এবং সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে গর্বিত। এই বাহিনীর একটি শক্তিশালী এবং অত্যন্ত কার্যকর অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি ব্যবস্থা রয়েছে।’
কর্মকর্তা ও সৈনিকদের মর্যাদা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী সবকিছু করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করে আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনা ভিত্তিহীন অভিযোগগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক এবং তীব্র নিন্দনীয়। প্রতিষ্ঠান বা এর সৈনিকদের মানহানি করার জন্য কাউকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে না।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ওয়াজিরাবাদে ইমরান খানের পদযাত্রার প্রস্তুতি সমাবেশে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় বন্দুকধারী। এতে ৭ জন আহত ও ১ জন নিহত হয়। ইমরানের খানের পায়ে গুলি লাগে।
এ ঘটনার পরপরই কর্মী সমর্থকরা ইমরান খানকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সন্দেহভাজন এক বন্দুকধারীকে তাৎক্ষনিক গ্রেফতার করে পুলিশ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ইমরান খানের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
গত ২৮ অক্টোবর পাকিস্তানের লাহোর থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত লংমার্চ শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। দেশটিতে আগাম নির্বাচনের দাবিতে লংমার্চের কর্মসূচি নেয় দলটি। লংমার্চের শুরুর দিন দেওয়া বক্তব্যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুম এবং আইএসপিআর ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল বাবর ইফতিখারকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সেনাপ্রধানের প্রতি আহ্বান জানান ইমরান খান।
২৮ অক্টোবর লাহোরের লিবার্টি চকে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইমরান পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ আঞ্জুমের সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডিজি, আইএসআই, মন দিয়ে শুনুন। আমি যা জানি তা বলছি না, কারণ আমি আমার দল ও দেশের স্বার্থে নীরব থাকছি। আমি আমার দেশের ক্ষতি করতে চাই না।’
ইমরান খান পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বিলাওয়াল ভুট্টো করাচিতে আইএসআই সেক্টর কমান্ডারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলে আপনি ওই কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তাদেরও [আইএসআই ও আইএসপিআর ডিজি] এখনই সরিয়ে দিন।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব তীব্র রূপ নেয় এ বছরের শুরু থেকে। গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে বিরোধী জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের কারণে ক্ষমতা ছাড়তে হয় ইমরান খানকে। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়ার ক্রীড়ানক হিসেবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে দায়ী করে আসছেন ইমরান খান। ক্ষমতা ছাড়ার পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেন তিনি।
ইমরান খানের লাগাতার তোপের মুখে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ আঞ্জুম এবং আইএসপিআর ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল বাবর ইফতিখার গত ২৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলন করেন।নজিরবিহীন ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেন আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট নাদিম আঞ্জুম ও আইএসপিআর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল বাবর ইফতিখার।
সংবাদ সম্মেলনে আইএসআই প্রধান জানান, ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক উপায়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে না জড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে সে সব কাজ থেকে বিরত ছিলেন তারা। তাই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন ইমরান খান।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সরাসরি মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
প্রাণঘাতী হামলায় আহত হওয়ার এক দিন পর শুক্রবার হাসপাতাল থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইমরান খান যেসব দাবি তুলেছেন তা তাকে চূড়ান্ত রাজনৈতিক লড়াইয়ে অবতীর্ণ করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ আঞ্জুমের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ইমরানের এসব দাবি সহসাই পূরণ হওয়ার কোনো লক্ষণ পাকিস্তানের সেনা নিয়ন্ত্রিত রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে না। ইমরান খান এমন দাবি তুলেছেন, যা থেকে পিছু হটার কোনো রাস্তা নেই তার।
সারাবাংলা/আইই