‘সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা পাবে’
৫ নভেম্বর ২০২২ ১৪:১৭
ঢাকা: সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা পেতে পারে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেনো ব্যহত না হয়। আমরা যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কোভিড আর যুদ্ধ স্যাংশনের কারণে আমাদের কিছুটা থমকে দাঁড়াতে হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু এ অবস্থা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাব, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
শনিবার (৫ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৫১তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২২ উদ্যাপন এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
সমবায় উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তার সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির যে প্রকল্প এটাও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ আমাদের লক্ষ্য গ্রামের মানুষও নাগরিক সুবিধা পাক এবং তারা সুন্দরভাবে বসবাস করুক। গ্রামের মানুষের উন্নত জীবন হোক। তাহলে আমাদের দেশ আরও উন্নত হতে পারবে।’
‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটা গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করতে চাই। সেখানে বসবাসের জন্য উন্নত বাড়িঘর তৈরি করে দেওয়া এবং সবচেয়ে ভাল হয় এখানে সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে ঘর বানিয়ে বা বাড়ি বানিয়ে আমাদের ফসলী জমি যেন নষ্ট না হয়। সমবায়ের মাধ্যমে যদি উন্নত ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়, তাহলে তারা সেখানে ফ্ল্যাট কিনতে পারবে। সেই রকম একটা পল্লী জনপদ আমাদের প্রকল্প আছে। সেটাও আমরা বাস্তবায়ন করা শুরু করেছি।’
‘আমি মনে করি আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নে সমবায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা রাখতে পারে। যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সবাইকে কাজ করার অনুরোধ। বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজ, যেটা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছেন; সেখানে উন্নত মানের ঘরবাড়ি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও উন্নত করবে বলে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন করাটাই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের উন্নয়নটা করতে গেলে সমবায়কে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সেইসঙ্গে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব একটা চিন্তা থাকতে হবে। নিজের জীবন জীবিকাকে উন্নত করার। সেক্ষেত্রে কাজগুলো করার সুযোগটা আমরা করে দিতে চাই।’
বর্তমান যুগে সারাবিশ্বে খাদ্যের অভাব ও জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কথাই বলছি। আমেরিকা-ইংল্যান্ড-ইউরোপের কথাই বলছি। সেই সেই ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরও উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়ানো এবং সঞ্চয় করা, যাতে করে এই অভিঘাত থেকে আমাদের দেশের মানুষ রক্ষা পায়, সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে বলে দাবি করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, এই লক্ষ্য স্থির করেছেন বলেও অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প বা আমার বাড়ি আমার খামার এখানে যে সমস্ত সমবায়গুলি করা হয়েছে তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তাদের আরও উন্নতভাবে যাতে কাজ করতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করতে হবে। এখানেও সমবায় করে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু একসঙ্গে যদি কাজ করা যায় তাহলে সবাই আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে আর সক্ষমতা অর্জন করবে।’
যোগাযোগ অবকাঠামোত উন্নয়ন, শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের কথা তুলে ধরে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ আর স্যাংশনের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
আমরা আমি আশা করি যে, এই অবস্থা থাকবে না। আমরা সোলার প্যানেল দিচ্ছি, আমাদের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। নেপাল- ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ ক্রয় করারও জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। হয়ত সময় সাপেক্ষ কিন্তু এই সমস্যার আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারব। কিন্তু আমাদের দেশে সকলকে সঞ্চয়ের দিকে নজর দিতে হবে এবং প্রত্যেকেই উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারো এতোটুকু জমি যেন পড়ে না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা দুর্যোগ সহনশীল ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সে কারণে এবার যে ঘুর্ণিঝড় হলেও সেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। তারা নিজেদের ঘরেই থাকতে পেরেছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত মানুষ সমবায়ের মাধ্যমে তারা যেন উৎপাদন বাড়াতে পারে সেদিকে বিশেষ করে দৃষ্টি দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট, আমাদের এই সংকটটা যেন দেখা না দেয়। তাই আবারও খাদ্য উৎপাদনের দিকে গুরুত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ ফজিলাতুন নেছা মহিলা সমবায় সমিতির মাধ্যমে দক্ষতা সৃজন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া নেওয়া হয়েছে। এতে সমবায়ে মহিলাদের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহিলাদের হাতে টাকা গেলে সেটার যথাযথ ব্যবহার হয় এটাও বাস্তব। তার সুফলটা পরিবারও পায় আর দেশবাসীও পাবে।’
সমস্ত উন্নয়নের পরিকল্পনাই হচ্ছে তৃণমূলের মানুষকে কেন্দ্র করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যারা যুবসমাজ শুধু চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেরাই কাজ করতে পারেন। খাদ্য উৎপাদন বা খাদ্য খামার। এটা যত বেশি করতে পারবে, আর আমরা যে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা। যেটা আমাদের দেশের চাহিদা মেটাবে, বিদেশেও পাঠাতে পারবো।’
কাজেই এই ক্রান্তিকাল সময়ে আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা পেতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন এবং সমবায় আন্দোলনের সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন কোনমতে ব্যহত না হয়। আমরা যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কোভিড আর যুদ্ধ স্যাংশনের কারণে কিছুটা আমাদের থমকে দাঁড়াতে হয়েছে এটা ঠিক কিন্তু এ অবস্থা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাব, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক ড. তরুণ কান্তি সিকদার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান।
শুরুতে জাতীয় সমবায় দিবসের একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোট নয়টি সমবায় সমিতি এবং একজন ব্যক্তিকে জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০২১ প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ