চট্টগ্রামের ডিসিকে ‘ডিসি হিল’ ছাড়তে বললেন মোশাররফ
৫ নভেম্বর ২০২২ ১৯:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে ‘ডিসি হিলের’ ওপর থেকে তাদের বাসভবন সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর সিআরবি চত্বরে ‘নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম’ আয়োজিত সমাবেশে মোশাররফ এ আহ্বান জানান। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ না হওয়ার আশ্বাস পেয়ে সংগঠনটি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রসঙ্গক্রমে সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ডিসির এই পাহাড়ের ওপর থাকার কোনো দরকার আছে ? কোনো প্রয়োজন নেই। চট্টগ্রামে এসে পাহাড়ের ওপরে বিশাল বাড়িতে থাকে। বদলি হয়ে যখন ঢাকায় যায় যুগ্ম-সচিব হয়ে, তখন একটা বাসার জন্য আমাদের পেছনে পেছনে ঘোরে। আমার বয়স হয়ে গেছে। এখনও দাবি তোলার সুযোগ আছে। এই ডিসি হিলকে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ পার্ক করতে চাই।’
পাহাড়ের ওপর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের থাকার প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এত বড় পাহাড়ের ওপর ডিসির থাকতে হবে কেন? চট্টগ্রামে তো আরও অনেক জায়গা আছে। সেখানে বাংলো বানিয়ে থাকুক। ডিসি, বিভাগীয় কমিশনারের জন্য অন্য জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। পাহাড় ছেড়ে দেন।’
সমবেতদের সমর্থন পেয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন একমত হয়েছেন ডিসি হিলে পার্ক হবেই।’
উল্লেখ্য, নগরীর নন্দনকাননে দৃষ্টিনন্দন ডিসি হিলের চূড়ায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবন আছে। আর পাহাড়ের পাদদেশে মুক্তমঞ্চে বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক আয়োজন করত, যার অনুমতি নিতে হতো জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে। তবে মুক্তমঞ্চ তৈরির আগে থেকেই বর্ষবরণের আয়োজন হত ডিসি হিলে।
২০১৭ সালে জেলা প্রশাসন শুধুমাত্র বাংলা বর্ষবরণ ছাড়া ডিসি হিলে সবধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন বন্ধ ঘোষণা করে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখেও তৎকালীন জেলা প্রশাসক এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এমনিক জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে ২০১৮ সালে ৪০ বছর ধরে আয়োজিত বর্ষবরণের অনুষ্ঠানও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল। এমনকি চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা রাস্তায় নামতেও বাধ্য হয়েছিলেন।
মাঝে-মধ্যে দু’য়েকটি আয়োজন ছাড়া ডিসি হিলে কোনো অনুষ্ঠানের অনুমতি এখনও দেয় না জেলা প্রশাসন। সিআরবি রক্ষার আন্দোলন শুরুর পর একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ডিসি হিল খুলে দেওয়ার জন্যও আন্দোলন হবে।’
এদিকে, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের পাশ থেকে শিশুপার্ক সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোশাররফ বলেন, ‘এখানে সুন্দর জায়গা ছিল। শিশুপার্কটা সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়েছে। এটা এখান থেকে উঠিয়ে দিতে হবে।’
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে ‘মার্কেটে’ পরিণত করার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো স্টেডিয়ামে মার্কেট নেই। আর আমাদের এখানে স্টেডিয়ামকে মার্কেট করে ফেলা হয়েছে। আউটার স্টেডিয়ামটা অপরিকল্পিতভাবে নষ্ট করে দিয়েছে। অথচ এই আউটার স্টেডিয়ামে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এনে সমাবেশ করেছিলাম।’
জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে আমার রক্ত ঝরেছে। আমি সাক্ষী দেব, জিয়া কোনো মুক্তিযুদ্ধ করেনি। জিয়ার নামে এখানে কোনো জাদুঘর থাকতে পারে না। এটাকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করা হোক।’
সাবেকমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ‘আমি গণপূর্ত মন্ত্রী থাকার সময় অনুদান দিয়ে আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠটাকে পার্ক করেছি। জাতিসংঘ পার্ক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাধার কারণে আমার সময় পারিনি। ইনশাল্লাহ সেটার টেন্ডার হয়েছে। জাতিসংঘ পার্ক হবেই।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম