Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিসেম্বর থেকে রাজপথ দখলের পাল্টা হুঙ্কার আওয়ামী লীগের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ নভেম্বর ২০২২ ২১:৪৭

ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠছে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির রাজনীতি। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসতে প্রতিনিয়ত পাল্টাপাল্টি বক্তব্যসহ সমাবেশ, পাল্টা-সমাবেশে শক্তির মহড়ায় নিজেদের শক্তির জানান দিচ্ছে।

এরই ধারাবাবিহকতার বরিশালে বিএনপির সমাবেশের একই দিনে ঢাকার রাজপথে শক্তির জানান দিতে শান্তি সমাবেশে ও প্রতিবাদ মিছিল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মূলত এর মধ্য দিয়ে ডিসেম্বর থেকে ঢাকার রাজপথ দখলের কঠোর বার্তা দিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে মধ্য বাড্ডায় বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য, সহিংসতা ও আগুন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা আসলে রাজপথ দখলের হুঙ্কার দিলেন।

মধ্য বাড্ডায় ইউলুপের সামনে একটির ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ করে শান্তি সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন নেতারা। পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিবাদ মিছিলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে মধ্য বাড্ডা ইউলুপ দিয়ে আমেরিকান দূতাবাসের সামনে হয়ে নতুন বাজারের দিকে যাত্রা শুরু করে। এক পর্যায়ে নতুন বাজারে গিয়ে মিছিল শেষ হয়।

এর আগে, দুপুর দেড়টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের অন্তর্গত বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে এসে যোগ দেয়। এতে ওইসব এলাকায় বিভিন্ন এলাকার সড়কে যান চলাচলে ধীরগতি ও বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিভিন্ন সড়কে যানজট ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞাপন

শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি এই মাত্র কুমিল্লা থেকে এলাম। কুমিল্লা মহানগর সমাবেশে বিশাল জমায়েত। ভেতরে যা লোক, বাইরে আরও তিনগুণ বেশি। ঢাকায় এসে দেখছি এক বিশাল জনস্রোত। এখানে এসে বরিশালের কথা ভাবছি। ফখরুল সাহেব ছয় জেলার লোক টাকা-পয়সা দিয়ে চারদিন আগে থেকে বরিশালে এনে রেখেছেন। আর এখানে ছয় থানার লোক। যা বরিশালের চেয়ে ডাবল।’

বিএনপিকে নালিশ পার্টি আখ্যা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে নালিশ করে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। বিদেশিরাই এখানে থাকে। এখন তারা দেখুক, কার কত শক্তি?’ খেলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মোকাবিলা হবে, আন্দোলনে হবে, নির্বাচনে হবে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে, ২১ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড সেই বিএনপির বিরুদ্ধে খেলা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অপেক্ষা করুন। সামনে ডিসেম্বর মাস। আপানারা নাকি ডিসেম্বরে আমাদের হটিয়ে খালেদা জিয়াকে নিয়ে খোমিনি স্টাইলে বিপ্লব করবেন। ঢাকার রাজপথে এই রঙিন খোয়াব কর্পূরের মতো উবে যাবে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ডিসেম্বরে শেষ খেলা হবে। আন্দোলনের খেলা। আগামী বছর ডিসেম্বরে ফাইনাল খেলা হবে। নির্বাচনের খেলা হবে। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাবেন, ভুলে যান। নির্বাচন করে আসতে হবে। তত্ত্বাবধায়কের ভূত মাথা থেকে নামান।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে ছাড়ব না। এই রাজপথ মুক্তিযুদ্ধের মাসে বিএনপির থাকবে না। এই রাজপথ আওয়ামী লীগের রাজপথ, মুক্তিযুদ্ধের রাজপথ, বিজয়ের চেতনার রাজপথ।‘

শান্তি সমাবেশে বিশাল জমায়েতের উপস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘মির্জা ফখরুল আমাদের জনগণ দেখায়। জনগণ আমাদের দেখাবেন না। জনগণের দল আওয়ামী লীগ। জনগণকে নিয়েই আজ শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন। পরিষ্কার কথা- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দেশে অগ্নিসন্ত্রাস করেছেন। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। লুটতরাজ করেছেন। ২১আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। আপনারা এই দেশে আওয়ামী লীগ করার অপরাধে হাত কেটেছেন, পা কেটেছেন, বাড়িঘরে আগুন দিয়েছেন। এই কথা আজও দেশবাসী ভুলে যায়নি।’

বিএনপির উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নানক বলেন, ‘এই দেশে অচলাবস্থার সৃষ্টি করবেন? এই দেশকে বিশৃঙ্খলায় নিয়ে যাবেন? সেটি আমরা হতে দেব না। একটি মানুষের ওপর আঘাত করলে আপনাদের একশ মানুষকে আঘাত খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই ১৪ বছর দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। স্থিতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি ওদের ভালো লাগে না। ওদের ভালো লাগার ওষুধ আছে। সেই ওষুধ দিয়েই ওদের ভালো লাগাতে হবে।’

বিএনপির উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘আমরা রাজপথে জেগে আছি। কোনো ধরনের অশান্তি সৃষ্টির পায়তারা করলে তোমাদের প্রতিহত করা হবে। বাংলাদেশে আর যাই হোক অশান্তি সৃষ্টি করতে আমরা দেব না।’

তিনি বলেন, ‘অপরাজনীতি করে বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করা হলে বরদাশত করব না। যারা শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করতে চায়, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই অপশক্তিতে মোকাবিলা করা হবে।’

নাছিম বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতিবাজ খালেদা জিয়ার কোনো সুযোগ নাই। আর যদি কোন উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় তাহলে খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জের কারাগারেই দেখবে দেশবাসী। খালেদা জিয়ার মঞ্চে আসা তো দূরের কথা, প্রয়োজনে সেদিন তাকে কেরানীগঞ্জেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকার গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেবে না। এটাই আমাদের চূড়ান্ত কথা।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্থানীয় এমপি একেএম রহমতউল্লাহ প্রমুখ।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আওয়ামী লীগ দখল রাজপথ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর