কপ-২৭ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল’
৬ নভেম্বর ২০২২ ২২:৩৪
ঢাকা: শুরু হলো জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্ষতিপূরণের জন্য ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ নামের একটি তহবিল গঠনের চেষ্টা করছে বহুদিন ধরে। উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশ সম্মেলনের মূল এজেন্ডাতে ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ নামের তহবিলটি গঠনের বিষয়টি এতদিন অবজ্ঞা করে গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বড় বড় দুর্যোগের ফলে কপের ২৭তম আসরের প্রথম দিনে এই তহবিল গঠনের বিষয়টি সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চাপ তৈরি হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার সবার ভোটে পাস হয়ে আলোচ্যসূচিতে ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ নামের এই তহবিল গঠনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য এটি বড় সফলতা বলে মনে করা হচ্ছে। কপ২৭ এর প্রেসিডেন্ট সামেহ শুকরি প্রেস কনফারেন্সে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠনের বিষয়টির তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে এটি অন্তর্ভুক্তিকরণে সবার সমর্থনের জন্য প্রশংসা করেন।
রোববার (৬ নভেম্বর) মিশরের স্থানীয় সময় সকাল দশটায় শুরু হয় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ২৭। চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। সম্মেলন শুরুর দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি কপ২৭ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট অলক শর্মার কাছ থেকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর শুকরি বলেন, ‘আজ এমন একটা সময়ে কপ২৭ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বিশ্বকে রাজনৈতিক টানাপোড়নের ভার বহন করতে হচ্ছে। বিশ্বে জ্বালানি ও খাদ্য সংকট চলছে। সে যাই হোক না কেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা যেন প্রভাব না ফেলে।’
এবারের সম্মেলনে মোট ২৭ টি অধিবেশন হওয়ার কথা রয়েছে সম্মেলনে এবং আগামীকাল ৭ নভেম্বর ও পরশু ৮ নভেম্বর বিশ্বনেতাদের বৈঠকের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া, সম্মেলনে ৯ই নভেম্বর ফাইনান্স নিয়ে আলোচনা হবে, ১০ই নভেম্বর সাইন্স এবং ইয়ুথদের নিয়ে আলোচনা হবে, ১১ই নভেম্বর ডিকার্বনাইজেশন নিয়ে আলোচনা হবে, ১২ই নভেম্বর এডাপটেশন এন্ড এগ্রিকালচার নিয়ে আলোচনা হবে, ১৩ই নভেম্বর সম্মেলন বন্ধ থাকবে, ১৪ই নভেম্বর ওয়াটার এবং জেন্ডার নিয়ে আলোচনা করা হবে, ১৫ই নভেম্বর এনার্জি নিয়ে আলোচনা হবে, ১৬ই নভেম্বর বায়োডাইভারসিটি নিয়ে আলোচনা হবে, এবং ১৭ই নভেম্বর জলবায়ু সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।
এবারের সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে মিশরের উপকূলীয় সবুজ শহর শারম আল-শাইখে। সম্মেলনটি UNFCC চুক্তি গ্রহণের ৩০তম বছরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ডেলিভারিং ফর পিপল অ্যান্ড প্ল্যানেট (Delivering for people & the planet)। এবারের সম্মেলনের মূল আলোচনার বিষয়বস্তু adaptation, finance, renewable energy, net zero, loss & damage, ও biodiversity থাকবার কথা রয়েছে। এছাড়া, গত কপ সম্মেলনগুলোর সফলতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরির সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের সম্মেলন এবং পৃথিবীর 90টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও ১৯০ টি দেশের প্রতিনিধিগণ এই সম্মেলনে যোগদান করার কথা রয়েছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিগণ ছাড়াও এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন পৃথিবীর বিভিন্ন শহরের মেয়র, সাংবাদিক, সাধারণ নাগরিক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান, জলবায়ু কর্মীসহ অনেকে।
সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জলবায়ু দূত জন কেরি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেফ্ তাইয়েফ এরদোগান, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাপ্ সোলস্, ইউরোপীয়ান কমিশনার ওরসোলা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, স্কটল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নিকোলা স্টারজন, ব্রাজিলের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লোলাসহ অনেকে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এইবারের জলবায়ু সম্মেলনে যোগদান না করলেও বাংলাদেশ থেকে সরকারের একটা শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করছেন।
সারাবাংলা/আরএফ/একে
সারাবাংলা/আরএফ/একে