যেকোনো অবস্থায় আমাদের তৈরি থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
৭ নভেম্বর ২০২২ ০০:২৭
ঢাকা: সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের তো ভুগতে হবেই। আমি তো বলেছি, যেকোনো অবস্থায় আমাদের তৈরি থাকতে হবে। আমরা তো দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে।
রোবাবর (৬ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদনেতা এসব কথা বলেন। এদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন চলছিল।
ডলাররের ওপর চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ওপর একটা চাপ আছে। অবশ্য ঋণপত্র খোলার জন্য যে বাড়তি চাপ তা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। আসছে জানুয়ারি থেকে যাতে ডলারের চাপ কেটে যায় সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি।’
সরকারের ঋণ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক নয়- এমনটি জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, ‘সরকারি ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৬ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আমরা কোনোদিনই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। আমরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করি। আমরা কখনও ডিফল্ডার হইনি। ভবিষ্যতেও হব না ইনশাল্লাহ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অর্থনীতিটা ধরে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবাইকে বলব, প্রত্যেককে কিছুটা কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে, অর্থ সাশ্রয় করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ রাখতে হবে। মোবাইল, টিভি, টেলিফোন সবক্ষেত্রেই সাশ্রয়ী হতে হবে। আসলে লালবাতিটা যদি জ্বলা থাকে বিল ওঠে। প্রতিটি পরিবার এ ব্যাপারে সচেতন হই। এই সুইচগুলো বন্ধ রাখলে বিলটা কম উঠবে। ইংল্যান্ডে এটি কড়াকড়িভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের বিল বাড়লে কিন্তু ফাইনও করছে তারা। তারা বিদ্যুৎ বিল ৮০ শতাংশ বাড়িয়েছে। সেখানে রেশন করা হয়েছে। ইউরোপ এই শীতের সময় প্ল্যান করছে, কীভাবে তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি। মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়ছে। এতে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ যারা জ্বালানি তেল, গ্যাস, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করে, তাদের সবাই সংকটে পড়েছে। তারপরও আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ তার থেকে আলাদা নয়। তার ফলাফল ভোগ করতে হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমদানি পণ্য বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, সার, বীজ ও তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়ছে। পণ্য পাওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তো দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এক কোটি মানুষকে কার্ড দিয়েছি। তাদের ৩০ টাকা কেজিতে চাল দিয়ে যাচ্ছি। তেল, চিনি, ডাল কম মূল্যে সরবরাহ করে যাচ্ছি।’
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনটা বাড়াতে হবে। আমদানি করা জিনিসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। সেইসঙ্গে আমাদের রফতানিটাও বাড়াতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি। যে কারণে আমি আহ্বান করছি, এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখবেন না। খাদ্যদ্রব্য রিজার্ভ থাকার পরেও বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমদানি করেছে সরকার।
রশিয়া বাধা সরিয়ে নেওয়ায় ইউক্রেন থেকে গম ও তেল আসা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। দেশে আমন ও আউশ ধান সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বোরো উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ সময় তিনি সংসদে দেশের আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি, রিজার্ভ, বৈশ্বিক মন্দায় সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভ গেল কোথায়?- শুধু বললে তো হবে না। আমরা বিনাপয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি। এই ভ্যাকসিন কিন্তু ডলার দিয়ে কিনতে হয়েছে। সিরিঞ্জ কিনতে হয়েছে। করোনাকালে চিকিৎসাকর্মীদের আলাদা ভাতা দিয়েছি।’
সরকার সার্বিক বিষয়ে সতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। এখন থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই বিষয়টি পর্যালোচনা করতে হবে। ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয় সেটাও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের বিলাস দ্রব্যের আমদানি কমাতে হবে। বা এর ওপর আমাদের ট্যাক্সও বসাতে হবে বেশি করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে সবাই আলোচনা করে। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন রিজার্ভ পাই ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা ক্ষমতায় এসে কিছুটা বাড়িয়েছিলাম প্রায় ৪ বিলিনের কাছাকাছি চলে আসে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়রি ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ পাই ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন কিন্তু রিজার্ভ নিয়ে এত আলোচনা হয়নি। ৮ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে রিজার্ভ ছিল ১৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ দফা ক্ষমতা গ্রহণের সময় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘২০২০ সালের ৩০ জুন রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালের ৩০ জুন রিজার্ভ গিয়ে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২২ সালের ৩০ জুন ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা প্রায় ৪৮ বিলিয়রে কাছাকাছি গিয়েছিলাম। করোনার সময় সবকিছু বন্ধ থাকার পর যখন উন্মুক্ত হলো তখন আমাদের আমদানি বাড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে রিজার্ভও কমতে থাকল। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের রিজার্ভ ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের যে রিজার্ভ আছে সেটা দিয়ে অন্তত পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট।’
২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এই যাদের অবস্থা তাদের কী জনগণ ভোট দেবে? খালেদা জিয়া কেন জেলে? তিনি তো দুর্নীতির দায়ে জেলে। অর্থপাচারে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম