Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরতে চায় চারুকলা ইনস্টিটিউট

চলন্ত চাকমা, চবি করেসপন্ডেন্ট
৭ নভেম্বর ২০২২ ১৯:২০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মূল ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউট। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তারপর থেকে সেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন।

সেই থেকে দীর্ঘ ১১বছরের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে চারুকলা শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনা হয়নি। এদিকে গত বুধবার থেকে আবাসন ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সংযোগ ও পাঠাগার সংস্কারসহ ২২দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ সব দাবি পূরণ করতে না পারলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে চান বলেও জানান। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও এই দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা জানান, অবস্থান কর্মসূচির ৫ম দিনের দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন এবং চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিচালক এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কয়েকদফা আলোচনা হয়। এতে চারুকলা ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত। এই ছোট্ট ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চবি মূল ক্যাম্পাসে হস্তান্তরের বিষয়ে প্রক্টর, ডিন এবং শিক্ষার্থীরা একমত পোষণ করেন।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক আগামী ৩দিনের মধ্যে একাডেমিক মিটিং সম্পন্ন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে মতামত জানাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই তিনদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। মৌখিক কিংবা আশ্বাসে নয়, স্থায়ী সমাধান চান শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের ২২ দাবির মধ্যে আছে-ঝুঁকি মুক্ত ও নিরাপদ ক্লাস রুম দিতে হবে,ছাত্র-ছাত্রী হল এবং ডাইনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে,প্রতিটা ভবনে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব বাসের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত টয়লেট এবং মেয়েদের জন্য নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, ক্লাসের বরাদ্দকৃত আর্ট ম্যাটেরিয়ালের ব্যবস্থা ও পরীক্ষার প্রশ্নে উল্লেখিত ম্যাটেরিয়ালের ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ ক্লাসরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও যথাযথ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা।

লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান বই সংকট ইউপিএসের ব্যবস্থা করে লাইব্রেরি ব্যবহারের সময় বাড়ানো, চারুকলায় অকেজো পড়ে থাকা জেনারেটরের ব্যবস্থা চালু করা,মেডিক্যাল ব্যাকআপ ফার্স্ট এইড সহ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত রাখা, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার মাঠসহ পর্যাপ্ত ইন্সট্রুমেন্টের ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের জন্য ফটোকপি মেশিন প্রিন্ট ও স্টেশনারি সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেওয়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নির্মূলকরণ, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক সংকট দূরীকরণসহ পর্যাপ্ত লাইট-ফ্যানের নিশ্চিত করা।

ছাত্র ও ছাত্রী মিলনায়তনের ব্যবস্থা, সেমিনারের পরিধি বাড়ানো প্রজেক্টের ও পর্যাপ্ত সাউন্ড সিস্টেম নিশ্চিত করা,পুরো প্রাঙ্গণে ওয়াইফাই সংযোগ নিশ্চিত করা,প্রার্থনাগারের সুব্যবস্থা চাই, ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা,প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য লকারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা,কম্পিউটার ল্যাবে পর্যাপ্ত কম্পিউটার এর সুব্যবস্থা ও প্রজেক্টর দিতে হবে,মডেলের সংকট সমাধান করতে হবে।

জানা যায়, ১৯৬৯ সালে শিল্পী রশিদ চৌধুরীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধীনে ‘সহায়ক’ বিষয় হিসেবে শিল্পকলা বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চারুকলা শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে রশিদ চৌধুরীকে বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত করার মধ্যদিয়ে স্বতন্ত্রভাবে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চারুকলা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের লক্ষে চারুকলা বিভাগ হিসেবে এটি চালু করা হয়। শুরুতে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ড. আবদুল করিম ভবনে এই বিভাগের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হতো।

পরে ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ৪৬২ তম সিন্ডিকেট সভায় ৮৬ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চারুকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপর ২০১০ সালের ২ আগষ্ট চারুকলা ইনস্টিটিউট ঘোষনা করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী আলম সারাবাংলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের নানা সংকট রয়েছে। নানান সমস্যায় জর্জরিত ভোগান্তিরও শেষ নেই। সে কারণে এসব সংকট নিরসনে ২২ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন চলছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যেসকল সুযোগ সুবিধা পাওয়া উচিত। এই ছোট্ট ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চবি মূল ক্যাম্পাসে হস্তান্তরের বিষয়ে প্রক্টর, ডিন এবং শিক্ষার্থীরা একমত পোষণ করেন।আমাদের দাবিগুলো মানতে ব্যর্থ হলে মূল ক্যাম্পাসে চারুকলাকে স্থানান্তরিত করতে হবে।

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী চনুমং মারমা সারাবাংলাকে বলেন, দাবি পূরণ না হওযা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমাদের চারুকলায় নানান সংকট রয়েছে। সেসব সংকটের সমাধান চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কিছু না। একটা বিশ্ববিদ্যালয় যেসব সুযোগ সুবিধা একজন শিক্ষার্থীর প্রাপ্য সেটা এই প্রাঙ্গণে কখনোই সম্ভব না বলে প্রশাসন বারবার বলেছেন। তাই এত বিভক্তি ভাগাভাগি না করে মূল ক্যাম্পাসে একত্রেই থাকতেই চাই।

চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ২২দফা দাবি পূরণ করতে ডিন ও প্রক্টররা কথা বলছেন। তাদের দাবি পূরণ না হলে মূল ক্যাম্পাসে যেতে চান। আমি একা কিছু বলতে পারছি না। মূল ক্যাম্পাসে যেতে হলে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেতে চাইলে তারা প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করুক। এখানেও চারুকলা সহজভাবে আসেনি। কাজটা সহজও ছিল না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যে ২২ দফা দাবি তুলছে। সেগুলোর মধ্যে মূলত তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল ক্যাম্পাসে ফেরতে আসতে চান। চারুকলা ইনস্টিটিউট তাদের একটি আলাদা প্রশাসন ব্যবস্থা আছে। শিক্ষার্থীরা যদি মূল ক্যাম্পাসে আসতে চান তাদের শিক্ষকদের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত লাগবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এসব কাজগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করতে হবে। সময়েরও প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি স্বল্পমেয়াদি সেগুলো সমাধান করে দেওয়া হবে। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতরে জানানো হয়েছে। যেগুলো দীর্ঘমেয়াদী সে সব দাবি পূরণে একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একমত।

সারাবাংলা/সিসি/একে

চট্টগ্রাম চারুকলা চারুকলা ইনস্টিটিউট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর