চবির নির্মাণাধীন হলের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি
৮ নভেম্বর ২০২২ ১৪:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে চলমান দুই হলের নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়েও শেষ হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন হলগুলোর দেয়ালজুড়ে পড়েছে শ্যাওলার আস্তরণ। হলগুলোর চারপাশে ঝোপঝাড়, ইট ও কংক্রিটের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অবকাঠামো দৃশ্যমান হলেও রং করার কাজও বাকি।
অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। ৪ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যায়ে এই প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনজুরুল আলম অ্যান্ড কোং। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি ছিল একই বছর ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করা। এখন পর্যন্ত এই কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। সাড়ে ৭ মাস চুক্তির এই কাজ ৩বছর ১০ মাসেও শেষ হয়নি হলের নির্মাণ কাজ। যার ফলে গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত ৫৩৭ তম সিন্ডিকেট সভায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যাদেশ বাতিল করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে নতুন করে টেন্ডার দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে বাকি কাজ শেষ করা হবে জানানো হয়েছে। চারতলা বিশিষ্ট এই হলে আসন সংখ্যা রয়েছে ৩১২টি।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে। প্রথমে ১৮৬ আসন দোতলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন করা হয়। ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলটি নির্মাণও করা হয়। কিন্তু আসন বরাদ্দ না দিয়ে কাজ শেষ হওয়ার দেড় বছর পর ২০১৭ সালের জুলাই থেকে হলটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার ফলে ১৮৬ আসন বিশিষ্ট দোতলা থেকে ৭৫০ আসন বিশিষ্ট ছয়তলা ভবন করা হয়। পরে ৫ বছরে ৬ দফায় কাজ দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৬০ শতাংশ। ২০ কোটি টাকার এই কাজ করছে ঢাকার প্রতিষ্ঠান ঢালী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।
এছাড়াও, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন হওয়ার প্রায় এক বছর পরেও চালু করা হয়নি। এই হলের কাজ শেষ করতে ব্যয় হয় ১৬কোটি ২৯ লাখ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য আটটি এবং ছাত্রীদের জন্য পাঁচটিসহ মোট ১৩টি ছাত্রাবাস আছে। এর মধ্যে ছাত্রদের দুটি ও ছাত্রীদের একটিসহ মোট তিনটি নতুন নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো এখনও খুলে দেওয়া হয়নি। ছাত্রদের ছয়টি ছাত্রাবাস পুরোপুরি ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে আছে।হলগুলোতে সিংহভাগ আসন ছাত্রলীগের দখলে।
অতীশ দীপঙ্কর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুমন বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোন অনুষদের শিক্ষার্থীদের হলে সংযুক্তি দেওয়া হবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এটির একটি নীতিমালা আছে। আমার কাছে এখনও নীতিমালা আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘হলের কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রকৌশলী দফতরে জানানো হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘হল দুটির কাজ প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ। বঙ্গবন্ধু হলের কাজের মেয়াদ ৬ বার বাড়ানো হয়েছে৷ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখী দাম বৃদ্ধি। মাঝে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে হয়ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ করতে পারেনি। সে কারণে অতীশ দীপঙ্কর হলের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। পুনরায় টেন্ডার হবে। তখন বাকি কাজ শেষ হবে।’
সারাবাংলা/সিসি/একে