কানের সমস্যায় ভুগছেন ৪২% রিকশাচালক, ৩১% ট্রাফিক পুলিশ
৮ নভেম্বর ২০২২ ১৯:০৮
ঢাকা: দেশে বেড়েই চলেছে শব্দ দূষণের মাত্রা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে দিনে দিনে যা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ৪৩ কোটি ২০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পেশাগত কারণে শব্দ দূষণের শিকার।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে রিকশাচালকদের মধ্যে শ্রবণশক্তি হারানোর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। যা প্রায় ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপরেই রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট। যাদের হার ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া সিএনজি ও লেগুনা চালকদের হার ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেট- এ পাঁচ সিটি করপোরেশনের আওতায় সড়কে কর্মরত পেশাজীবীদের প্রায় ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রবণ প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন।
২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুনে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স এই গবেষণা পরিচালনা করে। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সংস্থাটির মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণার এই তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের ডিপার্টমেন্ট অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক ডা. সাইকা নিজাম।
পাঁচ সিটিতে সড়কে কর্মরত ৬৪৭ জনের ওপর পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, সড়কগুলোতে শব্দের মাত্রা ৮৪ থেকে ৯৯ ডেসিবল পর্যন্ত, যা রাস্তার জন্য অনুমোদিত শব্দসীমার চেয়ে অনেক বেশি। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ৩৮ দশমিক ২ বছর এবং এদের সবার দিনপ্রতি গড় কাজের সময় ১০ দশমিক ৭ ঘণ্টা। এবং সপ্তাহে গড় ৬ দশমিক শূন্য ৪ ঘণ্টা।
গবেষণায় পাঁচ সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক পুলিশ, সার্জেন্ট, বাসের চালক ও হেলপার, পিকআপ ভ্যানের চালক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, সেডান ও এসইউভি, বাইকার ও রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের এক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন বিবেচনায় কানে শোনার সমস্যা সবচেয়ে বেশি ছিল কুমিল্লায়। যা ৫৫ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে সিলেট। যা ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থান ঢাকা সিটি করপোরেশনে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ। রাজশাহীতে সড়কে কর্মরত ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ পেশাজীবী কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছে।
গবেষণা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ কানে কম শোনা থেকে শুরু করে স্থায়ী বধিরতা তৈরি করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৪৩২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কানে শোনার সমস্যায় ভুগছেন। যাদের চিকিৎসার পাশাপাশি হেয়ারিং এইড ব্যবহার করা প্রয়োজন। এদের ৮০ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করে এবং এর অর্ধেকের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা এড়ানো যেত। শব্দ দূষণে তৈরি কানে কম শোনার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে- পেশাগত কারণে শব্দ দূষণের সংস্পর্শে আসা।
গবেষণার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশে সড়কে শব্দ দূষণের মাত্রা নির্ণয় ও কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণশক্তির ওপর সেই শব্দদূষণের প্রভাব নির্ণয় করা।
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, সড়কে শব্দদূষণের উৎস চিহ্নিত করা এবং মাত্রা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সড়কে কর্মরত পেশাজীবীদের কর্মঘণ্টা কমানো একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে উপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে। রিকশাচালক ও ট্রাফিক পুলিশের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।
সুপারিশে আরও বলা হয়, নিয়মিত শ্রবণশক্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। আচরণগত পরিবর্তন আনার জন্য কর্মশালার আয়োজন করা উচিত। শব্দদূষণ কমাতে আইন তৈরি করা উচিত এবং তা কঠোরভাবে বজায় রাখা উচিত। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে দেশব্যাপী বড় আকারে গবেষণা করা প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ন্যাশনাল সেন্টার ফর হিয়ারিং অ্যান্ড স্পিচ ফর চিলড্রেন (এসএএইচআইসি) এর সমন্বয়ে পরিচালিত গবেষণাটির অর্থায়নে ছিল অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম