Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘যেকোনো দুর্যোগে ক্ষতির ভার অধিকাংশ নারীকেই বহন করতে হয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৩২

ঢাকা: জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সারাবিশ্বেই যুদ্ধ, হানাহানি, সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে নারীরা বিশেষভাবে ক্ষতির শিকার হয়। কোভিড মহামারি থেকে শুরু করে যেকোনো দুর্যোগে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার অধিকাংশ ভার নারীকে বহন করতে হয়।

বুধবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক ওরিয়েন্টেশনে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্যেদের জন্য নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক এ ওরিয়েন্টেশন আয়োজন করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ। অনুষ্ঠানে স্পিকার একাধিক নারী সংসদ সদন্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, নারী নেত্রীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ওরিয়েন্টেশনে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ শীপা হাফিজা একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ১৩২৫-এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, ২০০০ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তার ৪২১৩তম অধিবেশনে এটি গ্রহণ করে। এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সব নীতিমালা তৈরি, বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় নারীদের সম্পৃক্ত করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের সমঅংশগ্রহণ, লিঙ্গভিত্তিক তথ্য সংরক্ষণ এবং শান্তি ও নিরাপত্তার জেন্ডার প্রেক্ষিত গবেষণা করা।

ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশের সরকার নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে। রেজ্যুলেশন ১৩২৫ একটি বিশেষ ধরনের পদক্ষেপ। যা সংঘাত বা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নারীর নিজের কথা নিজে বলা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে। এই রেজ্যুলেশন অনুযায়ী শান্তি প্রক্রিয়ায় নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি না থাকলেও মানবাধিকার ও নারীর নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক রেজ্যুলেশনের ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ সমর্থন দিয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় রেজ্যুলেশন ১৩২৫ও আমরা গ্রহণ করেছি।’

বিজ্ঞাপন

এতে কিছু কিছু মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় স্পিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মেয়েদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা, প্রচারের জন্য আলাদা বাজেট নির্ধারণ, সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার ওপর গুরুত্ব দেন।

জাতীয় সংসদের সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘আমাদের দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে শক্ত আইন থাকলেও প্রয়োগ নাই। নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে যৌন সহিংসতা দূর করতে আইন প্রয়োগে জোর দিতে হবে আমাদের।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার বলেন, ‘সারাবিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের অবদান বিশ্বস্বীকৃত। রেজ্যুলেশন ১৩২৫ গ্রহণের সময়েও বাংলাদেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পরিকল্পনাটি স্থানীয়করণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অস্ট্রেলিয়ার শক্ত অবস্থান। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতে পুরুষ ও ছেলেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, ‘আমরা সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রণয়নে কাজ করেছি। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাহায্য করবে। দেশে আপাত শান্তি বজায় থাকলেও ছোটখাটো নানা বিষয়েই নারী সর্বদা নির্যাতনের শিকার। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি গুরুত্বপূর্ণ।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল (ইউএন উইং) তৌফিক ইসলাম শাতিল বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পরিকল্পনাটি সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে পরিকল্পনাটির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের নারীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানান অঙ্গনে দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তবে সমাজের সকল স্তরের নারীদের দক্ষতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি।’

বাংলাদেশে কানাডিয়ান হাইকমিশনারের রাজনৈতিক কাউন্সেলর ব্রাডলি কোটস বলেন, ‘নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। সেক্ষেত্রে, জাতীয় পরিকল্পনাটি স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এ ক্ষেত্রে সিভিল সোসাইটির পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রয়েছে।’

ইউএন উইমেন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, ‘নারীর শান্তি ও নিরাপত্তায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত ১৩২৫ রেজুল্যুশনটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পথিকৃতের ভূমিকা রেখেছে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনাটি স্থানীয়করণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- সংসদ সদস্য সেলিমা আহমেদ, আবিদা আঞ্জুম, শবনম জাহান, সৈয়দা রুবিনা আখতার, কাজী কানিজ সুলতানা, মনিরা সুলতানা, মোসাম্মত খালেদা খানম, মুসতাক আহমেদ রবি, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, হোসনে আরা, অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরীন, জিন্নাতুল বাকিয়া, সুলতানা জাহান, নারগীস রহমান প্রমুখ।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নারী স্পিকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর