Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার্থী পিটিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীই মার খেল ২ নেতার হাতে!

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
৯ নভেম্বর ২০২২ ২২:২৮

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে রড দিয়ে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার জেরে দুই ছাত্রলীগ নেতা অভিযুক্ত সেই কর্মীকে পিটিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে এই ঘটনা ঘটে।

রড দিয়ে শিক্ষার্থী পেটানোর ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম মোনাফ প্রান্ত। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য। অন্যদিকে, এই ঘটনার জেরে তাকে পেটানো দুই ছাত্রলীগ নেতার নাম হৃদয় হোসেন ও ওজায়ের আহমেদ। এদের মধ্যে হৃদয় হাসান হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং ওজায়ের আহমেদ অর্থ সম্পাদক। এরা সকলেই বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুসের অনুসারী।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, রড দিয়ে মারধরের শিকার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম রাসেল মাহমুদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি আছেন।

রড দিয়ে মারধরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঢাবি শিক্ষার্থী নুর ইসলাম বলেন, ‘আমি ও রাসেল মাহমুদসহ আরও কয়েকজন হলের যমুনা ব্লকের ১১০০১ নম্বর রুমে থাকি। অঞ্চলভিত্তিক রুম ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের রুমে দক্ষিণবঙ্গের আটজন ছেলেকে সিট দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মোনাফও একজন। আর আমাদের অন্য একটি রুমে শিফট করার কথা হয়েছে। কিন্তু আমরা অন্য একটি রুমে শিফট হওয়ার আগেই মুনাফরা আমাদের রুমে চলে আসে এবং তারা তাদের জিনিসপত্র রুমে রাখে। এক পর্যায়ে তারা আমাদের জিনিসপত্রগুলো বাইরে বের করতে শুরু করে। তখন আমরা বলি, আমাদের একটু সময় দে। সবাই আসুক তারপর সব বের করি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলতে থাকেন, ‘‘তারপরও আমরা আমাদের জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর আমাদের আরেকবন্ধু রুমে এসে তার জিনিসপত্র বাইরে বের করা অবস্থায় দেখতে পায়। তখন সে প্রান্তের কাছে এর কারণ জানতে চায়। এরপর প্রান্ত উত্তেজিত হয়ে তাকে গালিগালাজ শুরু করে। বলতে থাকে, ‘তোরা সবাই দ্রুত বের হ। এতক্ষণ লাগে কেন? তোরা দ্রুত বের হবি। নইলে তোদের খবর আছে।’ পরে রাসেল বলে, ‘তুই এভাবে কথা বলছিস কেন? আমাদের এখনো রুম দেওয়া হয়নি। এখন আমর কই যাব? রুম দেওয়া হোক। তারপর যাব।”

নুর বলেন, ‘কথাবার্তার এক পর্যায়ে মোনাফ প্রান্ত পাশে থাকা রড দিয়ে রাসেলকে মারা শুরু করে এবং চড়-থাপ্পড় দেয়। মার খেয়ে রাসেল পরে গেলে আমরা দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যাই।’

এদিকে, মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে মোনাফ প্রান্ত বলেন, ‘রাসেল আমার ভালো বন্ধু। তার সঙ্গে গতকাল ছোট একটা বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এরপর বড় ভাইয়েরা সেটি মীমাংসা করে দিয়েছেন। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

মোনাফ প্রান্ত অভিযোগ করেন, ‘বরং এই ঘটনাকে পুঁজি করে হল ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক ওজায়ের আহমেদ ও কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক হৃদয় হোসেন আমাকে মারধর করেছেন। তারা আমাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে টেনে তুলে আবারও আমাকে মারে। মারধরের কারণে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’

মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক ওজায়ের আহমেদ বলেন, ‘না, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ অন্য অভিযুক্ত হৃদয় হোসেনকে ফোনে কল দেওয়া হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুস বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিচ্ছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। ঢাবির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আরও মানবিক মূল্যবোধ আশা করি।’

এ ঘটনায় বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল বাছিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি লিখিত অভিযোগ পাওয়া সাপেক্ষে তদন্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম

ছাত্রলীগ কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজয় একাত্তর হল শিক্ষার্থী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর