Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৪২% শিশু অক্সিজেন স্বল্পতায় ভোগে: গবেষণা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ নভেম্বর ২০২২ ১৯:৫৭

ঢাকা: দেশে প্রতি বছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। মারাত্মক নিউমোনিয়ায় ভোগা ৪২ ভাগ শিশুর রক্তে অক্সিজেন ঘাটতি (হাইপোক্সিমিয়া) থাকে। সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৭৩ মিলিয়ন মানুষ হাইপোক্সিমিয়া আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৩২ মিলিয়নই শিশু। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়া নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সিমিয়ায় ভোগে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৯ নভেম্বর) মহাখালীর আইসিডিডিআর,বিতে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে ‘মেডিক্যাল অক্সিজেন নিরাপত্তা’ বিষয়ে এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

শনিবার (১২ নভেম্বর) বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবসকে সামনে রেখে আলোচনা সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে আইসিডিডিআর,বি এবং ডেটা ফর ইমপ্যাক্ট।

আলোচনায় বাংলাদেশের সামগ্রিক অক্সিজেন পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করা হয়। এর পাশাপাশি মেডিক্যাল অক্সিজেন নিরাপত্তাসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্বল্প মূল্যে উদ্ভাবনের উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

আইসিডিডিআর,বির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, আমাদের চারপাশের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১ শতাংশ, কিন্তু আমাদের অক্সিজেনের দরকার হয় ১৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ। কিন্তু যাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম হাইপোক্সিমিয়া।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় সাত কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৩ কোটি ২ লক্ষই শিশু। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়া নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সিমিয়ায় ভোগে।

হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত যে কোন রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসাবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন বলে জানান ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিস্থিতিতে হাইপোক্সিমিয়া ঘটতে পারে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত নবজাতক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস এবং যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হৃদরোগ, এবং হাঁপানিসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে হাইপোক্সিমিয়া ঘটতে পারে। এমনকি অ্যানেস্থেশিয়াসহ প্রায় সব ধরনের বড় অস্ত্রোপচারকালে অজ্ঞান করার সময়ও মেডিক্যাল অক্সিজেন অপরিহার্য।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ঢাকা শহরে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণও হাইপোক্সিমিয়া। এ জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়ার পাশাপাশি শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো ও পুষ্টির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে মেডিক্যাল অক্সিজেন নিরাপত্তাসহ দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্বল্প মূল্যে অক্সিজেন উদ্ভাবনের ওপরও জোর দেয়া জরুরি।

ডা. এহসানুর রহমান বলেন, যখন করোনা মহামারি বিশ্বে আঘাত হানে, তখন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বড় একটি অংশের অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। সে সময় সারা বিশ্বেরই সব আকার ও আকৃতির স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলো অক্সিজেনের আকাশচুম্বী চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিল। যদিও সংকটাপন্ন ভারত অক্সিজেন একেবারে বন্ধ করে দেয়নি। এ সময় অক্সিজেন নিয়ে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা আমরা দেখেছি। উচ্চবিত্তরা অপ্রয়োজনে অক্সিজেন রেখে দিত, অন্যদিকে দরিদ্ররা পেত না।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ এর তথ্য তুলে ধরেন আইসিডিডিআর,বির নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক-চতুর্থাংশেরও কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে তিনটি অক্সিজেন উৎসের যে কোন একটি রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ ভাগে কনসেনট্রেটর, মাত্র ২১ ভাগের ফ্লো মিটারসহ অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া মাত্র ৬ ভাগের অক্সিজেন সরবরাহ বা বিতরণের ব্যবস্থা এবং পালস অক্সিমিটার ছিল।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে পরিচালিত আইসিডিডিআর,বির নেতৃত্বাধীন আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৬০টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ৭২ ভাগে হাসপাতালে পালস অক্সিমেট্রি যন্ত্রটি রয়েছে এবং মাত্র ৭ ভাগের আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস অ্যানালাইসিস (রক্তে অক্সিজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, অক্সিজেনের ঘনত্ব, অ্যাসিড-ক্ষারের ব্যালান্স পরিমাপ করার পরীক্ষা) করার ব্যবস্থা রয়েছে।

ড. মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি বলেন, করোনার সময় বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে, পালস অক্সিমিটার এবং বাবল সি-প্যাপের মতো স্বল্প মূল্যের উদ্ভাবনমূলক হস্তক্ষেপগুলোকে গ্রহণ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

আলোচনা সভায় মোহাম্মাদ যোবায়ের চিশতি ইথিওপিয়ার হাসপাতালে হাইপোক্সিমিয়া চিকিৎস্য তার উদ্ভাবন বাবল সিপ্যাপ ট্রায়াল সম্পর্কে আপডেট প্রদান করেন।

তিনি কেন্দ্রগুলোয় অক্সিজেন নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, শিশুরা তাদের শ্বাসকষ্টের কথা প্রকাশ করতে পারে না বড়দের মতো করে, তাদের অমানবিক কষ্টকে মানবিকতার সাথে গুরুত্ব দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে মনিটরিং, ইভালুয়েশন অ্যান্ড লিনিং অ্যাডভাইজার সিনিয়র গবেষক ড. কান্তা জামিল, ইউএসআইডির ড. ফিদা মেহরান, আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র ডিরেক্টর ডা. শামস এল আরেফিন, কান্ট্রি লিড অব ডাটা ফর ইমপ্যাক্টের সুস্মিতা খানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিটিকে রুখে দিল নিউক্যাসেল
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৮

সম্পর্কিত খবর