মহাসমাবেশ ভেন্যুর কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মানুষ আর মানুষ
১১ নভেম্বর ২০২২ ১২:২৩
ঢাকা: সকাল ১১টা। মহা সমাবেশ শুরু হতে তখনো বাকি সাড়ে তিন ঘণ্টা। আজিমপুর মোড় থেকে রিকশাটা পলাশী মোড় পর্যন্ত আসতেই রিকশা চালকের স্বগোতক্তি- ‘আজ শেষ’!! কী হয়েছে মামা? ‘দেখছেন না, সামনের অবস্থা?’’
হ্যাঁ, আসলেই দেখা হয়নি! সলিমুল্লা মুসলিম হলের সামনে থেকে শুরু। তারপর যতদূর চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ! রাস্তার দুই পাশে পার্ক করা বাসের সারি। ও হ্যাঁ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রধান ফটক থেকে মূল ভবন পর্যন্ত লাল ক্যাপ, লাল টি শার্ট পরা অংসখ্য মানুষ। এদের চেহারায় ছাত্রত্বের ছাপ। মুখে স্লোগান, ‘শুভ শুভ শুভ দিন, যুব লীগের জন্ম দিন।’ অগ্রজদের মহা সমাবেশে শোভা বর্ধনে ওরা অগ্রগামী।
পলাশী মোড় থেকে সমাবেশস্থলের দূরত্ব হাজার মিটার বা কম বেশি কিছু একটা হবে। বুঝতে আর বাকি থাকল না- এখান থেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে আজ ‘খবর আছে’!! বুয়েট-ঢাবি-ঢামেক-কে যুক্ত করা চার সড়কের সন্ধিস্থলে এসে চারিদিকে একবার চোখ বুলাতেই মনে হলো, ‘ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে’।
হাতের বামে টিএসসি, ডানে বকশিবাজার রোড, সামনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, পেছনে পলাশী মোড়- সবখানে শুধু মানুষ আর মানুষ। শেখ মনির হাতে গড়া যুবলীগের ৫০তম জন্মদিন অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সারা দেশে থেকে আসা সংগঠনটির নেতা, কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষী- নিজ নিজ ইউনিটের পছন্দ ও মনোনিত রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে হাজির হয়েছেন। কোনো ইউনিট লাল রঙের টি শার্ট ও ক্যাপ, কোনো ইউনিট সবুজ, কোনো ইউনিট কমলা, কোনো ইউনিট হলুদ, কোনো ইউনিট নীল, কোনো ইউনিট হলুদ, কোনো ইউনিট গোলাপী, কোনো ইউনিট বেগুনি রঙ পরে পুরো আয়োজনকে রংধনু রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলের সামনে এসে হাতের বামে মোড় নিতেই একজন ভলেন্টিয়ার বললেন, ‘ওদিক দিয়ে যেতে পারবেন না। সব বন্ধ। তারপরও দু’প্যাডেল মেরে সামনের দিকে আগানোর চেষ্টা রিকশা চালকের। এরপর নিজে থেকে ইউটার্ন নিয়ে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট ও ‘অমর একুশে’ হলের মাঝখানের সড়ক দিকে এগোনোর চেষ্টা! অতঃপর হাতের বামে আরেক দফা মোড় নিয়ে কবি সুফিয়া কামাল হল এবং কার্জন হলের মাঝখানের সড়ক দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া মাত্রই রিকশা চালকের ফের স্বগোতক্তি, ‘‘আজ আর সেগুনবাগিচায় যাওয়া হবে না’’!
অগত্যা, রিকশাটাকে হাতের ডানে ঘুরিয়ে সচিবালয় ও প্রেস ক্লাবের মাঝখানে এনে থামাতে হলো। সেখানেও লোকে লোকারণ্য। সবার গন্তব্য যুব মহাসমাবেশস্থলের মূল ভেন্যু ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
মেট্টোরেলের নির্মাণযজ্ঞের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পায়ে হেঁটে রাস্তা পেরোনোর পর সেগুনবাগিচায় অভূতপূর্ব দৃশ্য। চোখের সীমানা জুড়ে গোলাপী রঙের ছড়াছড়ি। যুব লীগের এই ইউনিটটার টি-শার্ট ও ক্যাপ গোলাপী রঙে রাঙানো। সামনে আরেকটু এগোতেই শিল্পকলা একাডেমির উত্তর গেট ও দুদকের মূল ফটকের সামনের গলিতে নীল টি-শার্ট ও ক্যাপ পরা যুব লীগের আরেকটি ইউনিটের শো-ডাউন।
এভাবে সমাবেশ স্থলের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, যুব মহাসমাবেশে যোগ দিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং এর আশপাশে জড়ো হয়েছে যুব লীগের নেতাকর্মী সমর্থক।
সংগঠনটির ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে মূল সমাবেশ। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন যুবলীগের সভাপতি ফজলে শামস পরশ।
মহাসমাবেশ সফল করতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে যুবলীগ। সমাবেশস্থল প্রস্তুত করতে দিন/রাত কাজ চলেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সারাবাংলা/এজেড/এমও