Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ওরা যত কথাই বলুক বিভ্রান্তির কিছু নেই, আমরা এগিয়েই যাব’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১১ নভেম্বর ২০২২ ১৮:০৮

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, আমিও বিশ্বাস করি, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। ওরা (বিএনপি-জামায়াত) যত কথাই বলুক, বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবেই গড়ে তুলব। ওই এইট পাস আর মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চালালে দেশের উন্নতি হয় না, সেটিই আমরা প্রমাণ করেছি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

সারাদেশের যুব-জনতার উপস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগের যুব মহাসমাবেশ ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের সড়ক ও এলাকাগুলো যুব-জনতার সমুদ্রে পরিণত হয়।

দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত যুব মহাসমাবেশস্থলে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আয়োজনে ছিল  সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও। কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের কণ্ঠে গানসহ কয়েকটি পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে সকাল ১০টার পর থেকে আওয়ামী যুবলীগের মহাসমাবেশে যোগ দিতে সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যুব জনতার স্রোতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সংগঠনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামী যুবলীগ। দুপুর আড়াইটা থেকে যুব মহাসমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

টানা মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে দেশের আর্থ-সামাজিকখাতে নানামুখী অগ্রগতি ও অর্জনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছি। রাস্তাঘাট পুল ব্রিজের উন্নতি করে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ১০০টি ব্রিজ একসঙ্গে উদ্বোধন করা হয়েছে। আমি জানি না, ইতিহাসে কেউ করেছে কি না? আমরা সেটিও করতে পেরেছি। কাজেই বাংলাদেশ পারে।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, এই ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী) বলেছিলেন। আমিও বিশ্বাস করি, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। ওরা (বিএনপি-জামায়াত) যত কথাই বলুক, বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবেই গড়ে তুলব।’

শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নসহ আধুনিক প্রযুক্তিশিক্ষা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেওয়া, সমগ্র বাংলাদেশে হাইটেক পার্ক তৈরি করা, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা তৈরিসহ তার সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গও তুলে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা জায়গায় মহিলা-যুবকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াবার সুযোগ পাচ্ছে। এই সুযোগটা আওয়ামী লীগ না এলে জীবনেও হতো না। ওই এইট পাস আর মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চালালে দেশের উন্নতি হয় না।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে ইঙ্গিত করে তার নাম উল্লেখ করে না শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি কারও গীবত গাইতে আসিনি। আমি আমাদের তরুণ সমাজকে এইটুকু বলব, তরুণ সমাজেরই দায়িত্ব দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। যুবলীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তোলার এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে। জাতির পিতাকে স্বাধীনতার পর অনেকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কোনো সম্পদ নেই, কিছু নেই। আপনি কিভাবে দেশ গড়বেন? তিনি বলেছিলেন, আমার মাটি আছে মানুষ আছে এই মাটি-মানুষ দিয়েই আমি দেশ গড়ব। আজকে সেটি প্রমাণিত সত্য। দেশপ্রেম থাকলে দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকলে এটি করা যায়। আমরা তা করে দেখিয়ে দিয়েছি।’

যুবলীগের নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সেটিই হবে সবার প্রত্যয় ঘোষণা, সেটিই হবে সবার প্রতিজ্ঞা।’

মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবলীগের নেতাকর্মীরা দল বাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে মহাসমাবেশস্থলের দিকে আসেন। মহাসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সংগঠনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তৈরি টি-শার্ট, ক্যাপ পরিধান করেন। ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, ভুভুজেলাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েও উৎসবমুখর পরিবেশে সমাবেশস্থলে যোগ দেন নেতাকর্মীরা।

১১ নভেম্বর যুবলীগের ‘যুব মহাসমাবেশ’-এ সারা দেশ থেকে ১০ লাখেরও বেশি লোক সমাগমের আশা ছিল সংগঠনের নেতাকর্মীদের।

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিসহ নানামুখি ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে উঠতে সংগঠনের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশের হাতে নেতৃত্ব আসে।

৭ম কংগ্রেসে সংগঠনের ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে উঠতে যুবলীগের মতো সৃষ্টিশীল নির্ভীক নেতৃত্ব উপহার দেওয়া হয়। এ ধারাবাহিকতায় এবার সংগঠনের নেতারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করেন। করোনা মহামারি সংকটে মানবিক সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করে, যা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

মহাসমাবেশের মূল পর্ব পরিচালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের পর বক্তৃতা পর্ব শুরু হয়।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।

সারাবাংলা/এনআর/একে

প্রধানমন্ত্রী যুবলীগ যুবলীগের সমাবেশ শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর