অলস সময় পার করছে বাংলাবাজারের ছাপাখানা
১২ নভেম্বর ২০২২ ০৮:২১
ঢাকা: নতুন বছর শুরুর প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বই। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ছাপাখানায় কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। তবে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের ছাপাখানার চিত্র পুরোটাই ভিন্ন।
নতুন বছরের বই ছাপানের জন্য নেই সেই কর্ম ব্যস্ততা। সব কিছু যেন ঝিমিয়ে পড়েছে, হারাতে বসেছে বাংলাবাজারের ছাপাখানার ঐতিহ্য। সরেজমিনে ঘুরে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকার বাংলাবাজারের ছাপাখানাগুলোতে এই দৃশ্য দেখা গেছে। ছাপাখানার ম্যানেজার কর্মচারীরা জানান, এই সময়ে বাংলাবাজারের ছাপাখানায় মানুষের আনাগোনা থাকত দেখার মতো। সব সময় যেন ভিড় লেগেই থাকত। প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাবাজারের ছাপাখানার শিল্পটি আজ বন্ধের পথে।
মনময়ুরী অফসেট প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনের ম্যানেজার মো. বাদল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রায় ৩৪ বছর ধরে এই প্রেসে কাজ করছি। প্রেসের কাজ না থাকায় এখানকার অনেক প্রেস বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের এখানে আগে ৬ জন কর্মী কাজ করত, এখন করে একজন। সরকারি সকল প্রকার কাজ এখন মাতুয়াইলের ছাপাখানায় করায়। এর ফলে ছাপাখানার কাজ না থাকায় মাসের অর্ধেক সময় বন্ধ থাকে ছাপাখানা। এছাড়াও বিদ্যুৎ ও কাগজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাপাখানার অবস্থা খুব খারাপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাবাজারে আশেপাশে মিলে প্রায় ১০০টার মতো ছাপাখানায় থাকলেও বন্ধ হয়ে গেছে ৮০টি। হাতেগোনা কয়েকটির কাজ চললেও বাকিগুলো বন্ধ থাকে।’
চাঁদপুর প্রেসের কর্মকর্তা মো. বিল্লাহ হোসেন বলেন, কাজ নেই, কাম নেই অলস সময় যাচ্ছে। ছোটখাটো কাজ করে কোনো রকমে দিন পার হচ্ছে আমাদের। আগে ছাপাখানার অভারটাইম করে ভালো টাকা আয় হতো। এখন দিন চলছে কষ্টের মধ্যে দিয়ে। আগে ৩ মেশিনে কাজ করত ১২ জন লোক, এখন করে ৩ জন। সরকারি নতুন বই ছাপানোর জন্য ডেমরার মাতুয়াইলে সব চলে গেছে। এজন্য আমাদের হাতে কোনো কাজ নেই। এখন ছোটখাটো কোচিং সেন্টার কিছু নোটবুক-বই ছাপানোর কাজই বেশি করি। যেটা সব সময় থাকে না।’
লাখী প্রেসের ম্যানেজাড সাখাওত হোসেন বলেন, ‘আগে আমরা গজ কাগজে কাজ করতাম, এখন বই ছাপানো হয় সিট কাগজে। আমরা ঘণ্টায় ৪/৫ হাজার বই ছাপাতে পারব আর মাতুয়াইলে ডিজিটাল মেশিনে প্রায় ১০ হাজার মতো ছাপানো সম্ভব। সব কিছু এখন ডিজিটাল। আমাদের তো পুরনো জিনিস। প্রোডাকশনও কম হয়। সব মিলিয়ে বাংলাবাজারের ছাপাখানার শিল্প হারানোর পথে অগ্রসর হচ্ছে।’
সারাবাংলা/এআই/এনএস