Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগামীতে টার্গেট ক্যাশলেস সোসাইটি গঠন: সজীব ওয়াজেদ জয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ নভেম্বর ২০২২ ২২:২৭

ঢাকা: আগামী দিনে বাংলাদেশকে নিয়ে নিজের লক্ষ্যমাত্রা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ফের ক্ষমতায় রাখে, আগামী টার্মের মধ্যে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে। পাশাপাশি মানুষ সম্পূর্ণ ক্যাশলেসভাবে চলবে। একটি ক্যাশলেস সোসাইটি গঠন করা হচ্ছে আমার টার্গেট।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেল আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল লেনদেন প্লাটফর্ম ‘বিনিময়’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এনএম জিয়াউল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মেজবাউল হক এই প্লাটফর্মের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করে একটি প্রেজেন্টেশন করেন।

ডিজিটাল পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনের পর কাজ শুরু করার নানাদিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, ‘তখন তো বিদেশি সংস্থা, বিদেশি দেশ, বিশ্বব্যাংক বলেন, ইউএন বলেন, সেখান থেকে দৌড়াইয়া আসে আমাদের কাছে। বলে তোমাদের সবকিছু ডিজিটাল করে দেব, পরিকল্পনা আমরা কবে দেব। কীভাবে কী করতে হয় শিখিয়ে দেব।’

‘তবে আলোচনা করে যা দেখতে পেলাম, আসলে এটি কীভাবে করতে হবে তা কিন্তু কেউ জানি না। তাদের উদ্দেশ্য হলো যে, তারা আসবে, তাদের কনসালটেন্ট নিয়ে আসবে। বড় বড় অংকের টাকা বিদেশে যাবে। তারা হয়ত তখন কিছু বানিয়ে দিয়ে যাবে, তারপর তারা চলে যাবে। হয়ত তখন তাদের একটি প্রজেক্ট করতে পাঁচ বছর লেগে যাবে, ছয় বছর লেগে যাবে।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমার্ণের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন সবকিন্তু আমাদের নিজস্ব করা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের প্ল্যানিংয়ের ক্ষেত্রে শর্ট টার্ম হোক, লং টার্ম হোক, প্রজেক্ট প্ল্যানিং হোক; কোথাও কোনো প্ল্যানিং বিদেশি সংস্থা করেনি। সম্পূর্ণ আমরা নিজেরা করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করেছে বিদেশি কোম্পানি বাট প্রজেক্ট প্ল্যানিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ণ শতভাগ আমাদের হাতে, আমরা করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন আমরা করেছি।’

বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল বাংলাদেশ ধাপে ধাপে করতে হয়েছে, সময় লেগেছে জানিয়ে জয় বলেন, ‘ডিজিটাল করতে হলে প্রথমে একটা দেশের নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রয়োজন। আপনি ডিজিটাল ব্যবহার করবেন, সেই ইন্টারনেট যদি না থাকে তাহলে আপনি ডিজিটাল কিভাবে ব্যবহার করবেন। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন ইন্টারনেট বলতে শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রামে পাওয়া যেত। আর মাসে তখন ইন্টারনেটের ভাড়া ৭৮ হাজার টাকার মতো ছিল। এটি কয়জন বাংলাদেশে অ্যাফোর্ট করতে পারে? সেখান থেকে টার্গেট নিলাম এটিকে কমিয়ে আনতে হবে কয়েকশ টাকার মধ্যে। তখন সবাই ভয় পেয়ে গেল? এত কীভাবে কমানো যায়?’

‘সেই নেটওয়ার্ক ইনফ্রাকটাচার বানানোর পরিকল্পনাও কিন্তু সম্পূর্ণ আমাদের’ বলেও মনে করেন তিনি। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমার্ণে আওয়ামী লীগের টানা মেয়াদে ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করার বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের ভালো একটা আইটি সেক্টর তৈরি হয়ে গেছে। আমাদের এক্সপোর্ট এখন এক/দেড় বিলিয়ন ডলার মতো হয়ে গেছে বছরে। ডিজিটাল বাংলাদেশের লাস্ট ফেইসটা থাকে সেবা, আইটি কোম্পানি সব ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে, কোম্পানি ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে। আমরা যখন ক্ষমতায় আছি মাত্র টু জি ছিল, আমরা থ্রি-জিতে চিই ফোরজিতে যাই, এখন আমরা ফাইভ জি অলরেডি পরীক্ষামূলকভাবে করে দিয়েছি। কোনো দেশ কিন্তু এত দ্রুত টেকনোলিজিতে প্রগেস করেনি, যেটি বাংলাদেশ করেছে।’

সামনের দিনের লক্ষ্যমাত্রার প্রসঙ্গ টেনে জয় বলেন, ‘অর্থনীতিতে বড় ট্রানজেকশন হয় কোনটা? সেটি হয় বিনিময়, টানা লেনদেন। টানা পাঠানো, এদিক-ওদিক পেমেন্ট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষ এটি ক্যাশে করে। স্পেশালি গ্রামের মানুষ ক্যাশে করে। তবে ক্যাশেতে অসুবিধা আছে। এক হলো যে, ক্যাশ চুরি হতে পারে। তারপর ভাতা-বেতন পাওয়ার সময় তাদেরকে হয়রানি করা হয়। কোনো সরকারি সেবা, কোথাও কিছু কিনতে গেলে হয়ত হয়রানি করা হয়। এটি হলো ক্যাশের অসুবিধা। আর ক্যাশের একটি লিমিটেশনও আছে। আপনি কত ক্যাশ রাখবেন সঙ্গে। সারাক্ষণ তো ক্যাশ হাতে থাকে না।’

জয় বলেন, ‘ভবিষ্যতে সারাবিশ্বই হচ্ছে ক্যাশলেস। এখন সবার হাতে স্মার্ট ফোন আছে বা মোবাইল ফোন আছে। বাংলাদেশে প্রায় সব নাগরিকের হাতে এখন মোবাইল ফোন। কেন না, আমরা এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিল দিতে পারব, কাউকে টাকা পারব।’

এটির পরিকল্পনার বিষয়েও আমরা অনেক আগে আরম্ভ করেছিলাম। আজকে আমাদের এত বড় বড় মোবাইল ফাইন্যান্স আছে। বিকাশ নগদসহ অন্যান্য যারা উঠে এসেছে। এটির পলিসি কিন্তু আমিই বানিয়েছিলাম, প্রায় দশ/বারো বছর আছে বলেও অবহিত করেন তিনি।

ইন্টারঅপারেবল সিস্টেম হচ্ছে ‘বিনিময়’উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়ে গর্বিত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে জয় বলেন, ‘বিদেশিরা ভেবেছিল আমাদের আমাদের সমস্যা কী? আর ওটার সমাধান তারা করে দেবে। তবে তারা বলার আগে, তাদের চিন্তার আগেই আমরা সমাধান করে নিয়েছি, কাজ আরম্ভ করে দিয়েছি। কারণ আমাদের মেধা আছে, আইটি আমরা জানি। বাংলাদেশকে ডিজিটাইজ করেছি আমরা। এটির জন্য কী করতে হবে, আমরাই সমাধান করে নেব। সমস্যার সল্যুশন বের করে নেব।’

আমি খুবই গর্বিত বিনিময় উদ্বোধন করতে পেরে জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘এখন ফোকাস হচ্ছে যে,নেটওয়ার্ক হয়ে গেছে, টেকনোলজি এগিয়েছে, বাংলাদেশে বড় বড় আইটি কোম্পানি হয়ে গেছে, বাংলাদেশে এখন ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, কম্পিউটারের মেমোরি চীপ উৎপাদন করা হচ্ছে, যেগুলো এক্সপ্রোর্ট করা শুরু হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘নেক্সট আমার টার্গেট হচ্ছে, আমাদের একটি ক্যাশলেস সোসাইটি বানানো। এ ছাড়া আজকে বাংলাদেশে প্রায় ৫/৬ কোটি মানুষ এখনো তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তারা গ্রামে আছে। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে নির্বাচন আছে। এক বছরের মধ্যে তো হবে না। কাজ আমরা আরম্ভ করেছি। বাট আমার টার্গেট আছে, আগামী তিন চার বছরের মধ্যে। বাংলাদেশের মানুষ যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ফের ক্ষমতায় রাখে, আগামী টার্মের মধ্যে বাংলাদেশের হান্ডেড পারসেন্ট মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে, তারা সম্পূর্ণ ক্যাশলেসভাবে চলবে। এটি হচ্ছে আমার টার্গেট। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং ওনার টিমের প্রতি, আমাদের আইটি ডিপার্টমেন্টের প্রতি।’

বিনিময় সিস্টেমটা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্গত একটি সেবা হিসেবে কাজ করবে জানিয়ে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা এই সিস্টেমটা ব্যবহার করেন। আমাদের যত ইন্টারঅপারেবল ট্রানজেকশন বাড়বে তত আমরা ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে আরও দ্রুত আগাতে পারব।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

ক্যাশলেস সোসাইটি গঠন সজীব ওয়াজেদ জয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর