বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় পাশে থাকবে জাপান: রাষ্ট্রদূত
১৪ নভেম্বর ২০২২ ২১:৩১
ঢাকা: বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, জাপান বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে আরও অনেক অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন পড়বে। এই উন্নয়নের যাত্রায় জাপান-জাইকা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ইতো নাওকি বলেন, ‘গুণগত অবকাঠামো উন্নয়নে জাপান সহায়তা অব্যাহত রাখবে, বিশেষত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বাণিজ্যিক করিডরে। আমরা এই মহা-উৎসবে আসতে পেরে আনন্দিত।’
রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশের মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা ত্বরান্বিতকরণ, নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা, যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাপান সরকার বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের জন্য আড়াইহাজার উপজেলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও জাপান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে, জাপান বাংলাদেশে কয়ালাচালিত মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষভাবে সাহায্য করছে।’
ইতো নাওকি বাংলাদেশে ভোটার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অর্থায়নে তার দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা’র আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৯শে নভেম্বর-১ ডিসেম্বর জাপান সফর করার সম্ভাবনা রয়েছে। সে সময় বৃহৎ প্রকল্পে ‘বিনিয়োগ ও অর্থায়নের’ মাধ্যমে উন্নয়ন প্রচেষ্টায় জাপানের ‘শক্তিশালী সম্পৃক্ততা’ চাইতে পারে বাংলাদেশ- এমনটা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে।
বিনিয়োগের বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “চ্যালেঞ্জ থাকলেও বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতি হবে বলে আশা করছি। ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার মতো আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি ‘কৌশলগত’ পর্যায়ে উন্নীত করতে চায় জাপান।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে আমাদের ব্যাপক অংশীদারিত্ব রয়েছে। আমরা এটিকে বৃদ্ধি করতে চাই। আশা করি আমরা আমাদের এই অংশীদারিত্ব একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব বলতে আমরা একমত হতে পারি।’
এ সময় রাষ্ট্রদূত নাওকি বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানির বিষয়ে তার দেশের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনা হবে।
ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) নিয়ে জাপানের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি খুব ব্যাপক, তবে কোনও দেশের বিরুদ্ধে নয় বা কোনও দেশের পক্ষেও না। জাপান বাংলাদেশকে এফওআইপি-এর অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। আমরা আমাদের ব্যবহারিক সহযোগিতার প্রচার চালিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সংযোগ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি হচ্ছে বাস্তব সহযোগিতার অংশ; যা জাপান প্রচার করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সিজিএস চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, জাপানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।
মুক্তিযুদ্ধে জাপানের নাগরিকদের সমর্থনের কথা তুলে ধরেন তিনি।
এফইএস, বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাধন কুমার দাস বাংলাদেশ ও জাপানের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার নানা দিক তুলে ধরেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করতে প্রস্তুত জাপান: জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শিগগিরই পূর্ণ মাত্রায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এ পরিস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। প্রত্যাবাসন অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাপান কাজ করতে প্রস্তুত।
ইতো নাওকি বলেন, ‘বর্তমানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের অনুকূল নয়। দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শিগগিরই পূর্ণ মাত্রায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জাপান বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার ও ভাসানচর ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং জীবন পরিচালনামূলক সেবাগুলোর সুযোগ অব্যাহত রাখতে জাপান সরকার কাজ করছে। জাপান তাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে এবং আইনি ও সম্প্রদায়-ভিত্তিক সুরক্ষা দান, স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন, পুষ্টি সহায়তা এবং ত্রাণের মতো মূল গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোর ওপর দৃষ্টি দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাপান মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং সেখানে সহিংসতা বন্ধ, বন্দিদের মুক্তি এবং সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে। শিগগিরই পূর্ণ মাত্রায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা খুবই কঠিন হবে। মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন হবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ, কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং গত পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হয়নি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এ পরিস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। প্রত্যাবাসন অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাপান কাজ করতে প্রস্তুত।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস), বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এসবি/একে