Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুগপৎ আন্দোলনের জন্য লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০২২ ১৬:২৭

ঢাকা: সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা, দফা ও কর্মসূচি প্রণয়নে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপি।

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রচণ্ডরকম আগ্রহ, উদ্যোগ, উদ্যম শুরু হয়েছে। এই লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে যাব এবং এই কাজগুলো করার জন্য একটা লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করব।

‘আমাদের দফাগুলো, আমাদের কর্মসূচি, রূপরেখা—সব নির্ধারণ হবে এই লিয়াজোঁ কমিটির মাধ্যমে। এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে বৃহত্তর একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। আপাতত আমরা যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আন্দোলনকে বেগবান করতে পারব’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘এই অনির্বাচিত, অবৈধ যে ফ্যাসিস্ট সরকার— যারা সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করে দীর্ঘদিন ধরে জনগণের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দখল করে রখেছে এবং ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতার যে লক্ষ্য ছিল, আশা ছিল, আকাঙ্ক্ষা ছিল- ওটাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটা ফ্যাসিবাদী, কর্তৃবাদী, একনায়কতন্ত্র সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। গণতন্ত্র, সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জনগণ যে রাষ্ট্রের মালিকানা এনেছিল, সেই মালিকানা আজকে তাদের হাতে নেই।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে পুরোপুরিভাবে এখন মেরামত করা প্রয়োজন, পুনর্গঠন করা প্রয়োজন । দেশের জনগণের হাতে এই দেশের মালিকা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জয় লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হঠানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমস্ত দলগুলোকে নিয়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে, একটা জাতীয় সরকার গঠন করে তার মাধ্যমে রাষ্ট্রের যে পরিবর্তন, সেই পরিবর্তন সূচনা করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এই লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলাম এবং ইতোমধ্যে ২২টি দলের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এরমধ্যে আমরা গণতান্ত্রিক মঞ্চের প্রত্যেকটি দলের সঙ্গে ইনডিভিজুয়ালি কথা বলেছি এবং আজকে আমরা দ্বিতীয় ধাপে গণতান্ত্রিক মঞ্চের জাতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি। আমরা কয়েকটা বিষয় একমত হয়েছি। সেটা হচ্ছে যে, এই সরকারে বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলতে একযোগে যুগপৎ আন্দোলন করব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই রাষ্ট্রের যে পরিবর্তনের কথা আমরা বলেছি সেই পরিববর্তনগুলোর ব্যাপারে আরও ডিটেলস আলোচনা করে আশা করি আমরা একমত হতে পারব। এই বিষয়টি দ্রুত করার জন্য পরবর্তীতে আরও কয়েক দফা আলোচনা হবে। তখন আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছব, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’

জে এস ডি’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে জনগণ কিন্তু মুক্তিও পায় নাই, স্বাধীনতাও পায় নাই। বহু মঞ্চ হয়েছে, বহু জোট হয়েছে। অনেক জোট, অনেক মঞ্চ আমি দেখেছি। আজকে একটা ঐতিহাসিক দিন। সারা পৃথিবীতে আজ মেসেজ যাবে যে, বাংলাদেশে রাতের অন্ধকারে যারা ভোট চুরি করে অনৈতিকভাবে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে, তাদেরকে সরানোর জন্য জনগণ বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির ব্যাপারে একমত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বৈরাচারের শুধু পতন ঘটাবে না, রাষ্ট্র মেরামত করবে, সংস্কার করবে, সংবিধান পরিষদ করবে এবং আন্দোলন, নির্বাচন— দু’টিই এক সঙ্গে করবে।’

বিজ্ঞাপন

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা যখন এই জোটটা গঠন করেছি— গণতন্ত্র মঞ্চ, তখন দুইটা এজেন্ডা সামনে রেখেছি। একটা হচ্ছে- এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে দেওয়া ও আন্দোলনে জয়লাভ করা এবং আরেকটি হচ্ছে রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা। এই দু’টো লক্ষ্য নিয়েই আমরা বিএনপির সঙ্গে আজ বসেছিলাম। আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, এই লক্ষ্য অর্জনে যত দ্রুত সম্ভব একটা লিয়াজোঁ কামিটি গঠন করব। এই লিয়াজোঁ কমিটি কর্মসূচি প্রণয় করবে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ।

এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এজেড/ইআ

বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগপৎ আন্দোলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর