Thursday 10 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাকা’র বাড়ির ফটকে লেখা হলো ‘রাজাকার বাড়ি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৩১ | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২২ ১৯:০৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো : যুদ্ধাপরাধী বাবা-ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের বাড়ির মূল ফটকে আবারও ‘রাজাকারের বাড়ি’ লিখে দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। একাত্তরের ‘টর্চার ক্যাম্প’ গুডস হিলের দেয়ালে লেখা হয়েছে- ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন কেন্দ্র’।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া সাকা চৌধুরীকে ‘শহিদ’ উল্লেখ করে তার ছেলে বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ২৯ অক্টোবর গুডস হিলকে ‘রাজাকার হিল’ ঘোষণা দিয়ে টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্যানার। ফটকে লেখা হয়েছিল ‘রাজাকার বাড়ি’। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেই লেখা মুছে ফেলা হয়েছিল। ফের একই লেখা লিখে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘রাজাকারের দোসররা যতবার মুছবে, ততবার লেখা হবে।’

বিজ্ঞাপন

১৯ দিন পর বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্যরা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে সঙ্গে নিয়ে আবারও নগরীর জামালখানে ‘গুডস হিলের’ সামনে যান। সেখানে মূল প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশ চলাকালে আবারও লাল রঙে সেই লেখার পাশাপাশি ফটকে এঁকে দেওয়া হয় নিষিদ্ধ ক্রসচিহ্ন।

সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘গত ২৯ অক্টোবর আমরা এ বাড়িকে রাজাকার বাড়ি আখ্যায়িত করে দেয়ালে চিকা লিখেছিলাম। কিন্তু সেই লেখা মুছে দেওয়া হয়। আমরা আজ আবারও এসেছি। এ লেখা যদি আবার মুছে ফেলা হয়, তাহলে এই রাজাকারের বাড়ি আমরা গুঁড়িয়ে দেব। রাজাকারদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হোক, বাংলার জমিনে তাদের দাফন করা যাবে না।’

বিজ্ঞাপন

হুম্মাম কাদের চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করেছে দাবি করে চাঁদপুর জেলা কমান্ডার এম এ ওয়াদুদ বলেন, ‘সাকা চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর সে নাকি শহিদ! সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী তার কুলাঙ্গার বাবাকে শহীদ আখ্যায়িত করে এদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের অপমান করেছে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।’

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের কীভাবে সাহস হয়, রাজাকার বাড়ির চিকা মুছে দেওয়ার? তারা যতবার মুছে দেবে, আমরা ততবার লিখব। দেশের আনাচে-কানাচে যত যুদ্ধাপরাধীর বাড়ি আছে সব বাড়িকে রাজাকার বাড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে। দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত। রাজাকাররা আঙুল ফুলে কলাগাছ। কোটি কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক। বীর মুক্তিযোদ্ধারা রিকশা চালান আর রাজাকাররা চালায় পাজেরো গাড়ি।’

সংগঠনটির নগর কমিটির আহবায়ক সাহেদ মুরাদ সাকুর সভাপতিত্বে ও জেলার সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল দুলু, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও সহ সভাপতি সরওয়ার আলম চৌধুরী মণি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেল, সংগঠনের জেলার আহবায়ক মশিউজ্জামান সিদ্দিকী পাভেল, চসিক কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু এবং চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ও সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী কাজী নুরুল আবছার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বান্দরবান জেলা কমান্ডার আবুল কাশেম চৌধুরী বীর প্রতীক, কক্সবাজার জেলা কমান্ডার মোহাম্মদ নুরুল আবছার, খাগড়াছড়ি জেলা কমান্ডার রইছ উদ্দিন, ফেনী জেলা কমান্ডার আবদুল মোতালেব, রাঙ্গামাটি জেলা কমান্ডার ইকবাল হোসেন চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমান্ডার হারুনুর রশিদ।

এর আগে, সকালে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। দাবিগুলো হচ্ছে— হুম্মামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের ও গ্রেফতার, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের রাজনীতি ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সকল সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সকল যুদ্ধাপরাধীর তালিকা করে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং মুক্তিযুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্যাতনের জন্য রাজাকার-আলবদর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গড়ে তোলা সকল ‘টর্চার ক্যাম্পকে’ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা।

১৯৭১ সালে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর নির্দেশে তার বাড়ি ‘গুডস হিলকে’ টর্চার ক্যাম্প বানিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা, যাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ফকাপুত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ রাজাকার-আলবদররা। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ওই টর্চার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো বলে সাকা চৌধুরীর মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে উঠে এসেছে।

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী। বক্তব্যে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়ি ফিরতে পারবেন না। সকল শহিদদের কবরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে।’ তিনি ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন, যে স্লোগান বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবহার করে না।

এর প্রতিবাদে গত একমাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।

সারাবাংলা/আরডি/একে

গুডস হিল টপ নিউজ রাজাকার বাড়ি সাকা চৌধুরী হুম্মাম কাদের

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর