Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আদালত অবমাননা আইন অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ নভেম্বর ২০২২ ১৮:১৪

ফাইল ছবি: হাইকোর্ট

ঢাকা: আদালত অবমাননার আইন-২০১৩ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে আইনটি অবৈধ ও বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, অবমাননা আইন-২০১৩ সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রকৃত চেতনাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং আইনের শাসনকে বাধাগ্রস্ত করে।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, এই আইনটি সংবিধান বিরোধী ও মৌলিক মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বৈষম্যমূলক। বিধায় আইনটি বাতিল ঘোষণা করা হলো।

এতে বলা হয়েছে, এই আইনের কয়েকটি বিধান বৈষম্যমূলক। কারণ এতে নির্বাহী বিভাগ এবং সাংবাদিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদকে স্পষ্টভাবে খর্ব করেছে।

রায়ে আদালত বলেছেন, আদালত অবমাননার আইন-২০১৩ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এজন্য আইনটি বাতিল ঘোষণা করা হলো।

রায়ে প্রতীয়মান হয় যে, আদালত অবমাননা আইন, ২০১৩-এর ধারা ৪, ৫,৬,৭,৯, ১০, ১১ এবং ১৩(২) ধারা ২৬(১) এর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০১৩ সালের এই আইনের বিধানগুলো নির্বাহী বিভাগের কর্মী এবং সাংবাদিকদের রক্ষা এবং তাদের সুবিধা দিতে করা হয়েছিল। যা সংবিধানের ২৭ এবং ১০৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। একইসঙ্গে এই আইনে যা সন্নিবেশিত করা হয়, তা বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।

রায়ে হয়েছে, এই আইনের উল্লিখিত বিধানগুলো সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদের আলোকে নাগরিককে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে তা খর্ব করা হয়েছে। পাশাপাশি এই বিধানগুলো আদালত অবমাননার জন্য সুপ্রিম কোর্টের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতাকে স্পষ্টভাবে হস্তক্ষেপ করেছে।

এই আইনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদালতের (সুপ্রিম কোর্ট) কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়ায় যে কোনো রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়ায়, তা সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদকে হতাশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

সংবিধান এবং সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সর্বোচ্চ। ২০১৩ সালের আইনের উল্লিখিত বিধানগুলো বৈষম্যমূলক কারণ এতে নির্বাহী বিভাগের কর্মী এবং সাংবাদিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদকে স্পষ্টভাবে খর্ব করেছে।

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। এই আইন সংবিধান, গণতন্ত্রের প্রকৃত চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে এবং আইনের শাসনকে বাধাগ্রস্ত করে।

অনুচ্ছেদ-১০৮ এ বলা আছে সুপ্রীম কোর্ট একটি ‘কোর্ট অব্ রেকর্ড’ হইবেন এবং ইহার অবমাননার জন্য তদন্তের আদেশদান বা দণ্ডাদেশদানের ক্ষমতাসহ আইন-সাপেক্ষে অনুরূপ আদালতের সকল ক্ষমতার অধিকারী থাকিবেন।

রায়ের যুক্তিতে বলা হয়েছে, যেহেতু এই আইনের উল্লিখিত ধারাগুলো সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৬(১), ২৭ এবং ১০৮ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই আদালত অবমাননা আইন-২০১৩ (২০১৩ সালের ৪ নং আইন) ধারাগুলোকে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়েছে। যা সংবিধান লঙ্ঘন করে। তাই এই আইন বাতিল এবং অবৈধ। যেহেতু আইনের এই ধারাগুলো, সংবিধানের মূল বিষয় এবং সেগুলো ছাড়া পুরো আইনটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়, তাই পুরো আইনটি অকার্যকর এবং অবৈধ।

এ রায়ের ফলে আদালত অবমাননা আইন-১৯২৬ তার পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে গেল বা পুনরুদ্ধার করা হলো।

এ বিষয়ে রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এ রায় আদালত অবমাননা প্রতিরোধে মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। সরকারের আদালত অবমাননা আইন-২০১৩ অপরাধ দমন হালকা করেছিল। এ আইনটি বাতিলের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন।

পরে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন। তবে সেটি মঞ্জুর করেননি সুপ্রিম কোর্টের চেম্বারজজ আদালত। আবেদনটি ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন চেম্বার জজ আদালতের তৎকালীন (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি) বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। কথা ছিল, ওই বছরের ৩ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

চেম্বার আদালতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আবেদন জানান। তাদের পক্ষে আদালতে আবেদনটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মো. বখতিয়ার হোসেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মূল রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

ওই রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সরকারি কর্মচারীদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের কথা বিবেচনায় রেখে সরকার আইনটি প্রণয়ন করেছিল। আদালত আইনটি বাতিল ঘোষণা করেছেন।

২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে আদালত অবমাননা আইন, ২০১৩ পাস হয়। ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননার আইন রহিত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশিত হয়। আইনের ৪, ৫, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৩ (২) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২৫ মার্চ দুই আইনজীবী রিট আবেদনটি করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল আদালত রুল জারি করেন। পরে রুল যথাযথ ঘোষণা করে আদালত রায় ঘোষণা করেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

আদালত অবমাননা আইন পূর্ণাঙ্গ রায়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর