এবার নয়াপল্টনে জনতার আদালত বসানোর ঘোষণা
১৬ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৫২
ঢাকা: জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালত বসানোর ৭ বছর পূর্তির দিনটিতে আগামী ২৬ নভেম্বর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালত বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা কামরুল হাসান নাসিম।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) নিজের ফেসবুক পোস্টে এ ঘোষণা দেন তিনি। এর আগে, ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালত বসান কামরুল হাসান নাসিম।
নিচে তার ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘বিএনপি পুনর্গঠন নাকি নাশকতা করার প্রস্তুতি জরুরী? এমন প্রশ্ন কথিত জাতীয়তাবাদী শক্তির ধারকদের মন খারাপ করাবে। আর সত্যিকারের জাতীয়তাবাদীরা বলবে, হ্যাঁ, জনস্বার্থের দল হয়েই বিএনপিকে তা প্রমাণ করে সরকার দলকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে।
আসছে ২৬ নভেম্বর, ২০২২। ৭ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের এই দিবসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বসেছিল জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালত।
দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বরে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, “পুনর্গঠনের জন্য বিএনপির গঠনতন্ত্র অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘স্থগিত’ ঘোষণা করেছেন ‘আসল’ বিএনপির নেতা কামরুল হাসান নাসিম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আদালতের আদলে দুটি কাঠগড়া বানিয়ে জনতার কাছ থেকে তিনি এ রায় নেন!
কামরুল হাসান বলেছেন, এটা হচ্ছে জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালত। সেখানে তিনি বাদী হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির পাঁচটি অসুখের কথা তুলে ধরে জনতার কাছে বিচার চান। তা হলো: খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ, তাঁরা বিদেশি শক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে, দলে জনস্বার্থ সংরক্ষণে রাজনীতি নেই, জাতীয়তাবাদী দলটি জামায়াতেবাদী দলে পরিণত হয়েছে এবং নাশকতার রাজনীতি বেছে নিয়েছে।
কাঠগড়ার একটিতে কামরুল দাঁড়ান, আরেকটিতে ছিল পাঁচটি অসুখের প্ল্যাকার্ড। সামনে ছিল কিছু মানুষ। কামরুল হাসান কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিএনপির গঠনতন্ত্র স্থগিতের দাবি জানান। এ সময় উপস্থিত লোকেরা হ্যাঁ বলেন। এরপর কামরুল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উচ্চ আদালত বসানোর দাবি জানালে লোকজন আবারও হ্যাঁ বলেন।”
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারী বিএনপি পুনর্গঠনের ডাক দিই। যদিও ওই একই মাসের ১৭ জানুয়ারীর একটা সংবাদ সম্মেলন দেশে আলোচিত হয়ে পড়ে। যখন আমি বলেছিলাম। বিএনপির ৫টি অসুখ সারাতে হবে। আমি কেবলমাত্র ওষুধওয়ালা।
দেশের মুলধারার শীর্ষ অনলাইনমাধ্যম বিডিনিউজ ওই ১৭ জানুয়ারী এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, “দলটির ক্রান্তিলগ্নে ও অসুস্থতাকে ঠিক করতে আমি চিকিৎসক।”
দলের পুনর্গঠন চেয়ে একপর্যায়ে ৯টি কবিতা উৎসর্গ করে দলিয় বিপ্লব করার ঘোষণা রাখি। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারী, ১৭ জানুয়ারী, ৫ মে ও ১৭ সেপ্টেম্বর দলিয় বিপ্লবের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকবারই নেতাকর্মীবৃন্দ দলের নয়া পল্টন কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করে বলতে যায়, এখানেই বসবে জাতীয়তাবাদী জনতার উচ্চ আদালত। কিন্তু, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের চাকুরী করা লোকগুলোর নির্দেশে আমাদের ওপর নির্মমভাবে আক্রমণ চালানো হয়। আমার ছেলেরা রক্ত দিয়েছে। মেয়েরাও দিয়েছে। একদিকে রক্ত ঝরছে, অন্যদিকে সে অবস্থায় সংবাদমাধ্যম কে দেয়া সাক্ষাতকারে বলছে, হ্যাঁ, আমরা বিএনপি পুনর্গঠনের জন্য এসেছি, নাসিম ভাই এর আহবান কে সাড়া দিয়ে। নিশ্চয়ই তা রাজনৈতিক সচেতনগোষ্ঠির কাছে অজানা নয়।
রাজনীতিক হতে পারার জ্বালা কম নয়। বিশেষত বাংলাদেশের মত দেশে। সন্দেহ, একটি জ্বালার মত করে। যেমন, দাম্পত্য সংকট সৃষ্টির প্রাথমিক উপকরণ হল এই সন্দেহ। কী আশ্চর্য ! দুইটি শক্ত রাজনৈতিক বলয় ঘিরে তোমাকে রাজনীতি করতে হবে। এমন শর্ত জনশ্রেণি সৃষ্ট উদ্যোগে নিষ্পত্তির সড়কে দাঁড়িয়ে গেছে। এর বাইরে উন্নত রাষ্ট্রচিন্তার উদ্রেকে ভেসে গেলেই মহাবিপদ। কারো ভ্রু কুঁচকে যাবে ! কেহ সন্দেহ করবে।
এদিকে তাঁরা উভয়েই ভাগ্যবান। বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তাঁর পুত্র তারেক রহমানও। কী সুন্দর করে তাঁরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন ! প্রেক্ষাপট তো তৈরি হয়েছেই। একের পর এক সমাবেশ করে যাচ্ছে বিএনপি।
জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেয়া। অতি অবশ্যই তেমন স্রোত একটা পথ দেখায়। সেই পথ গন্তব্য দেখিয়ে বলে, এসে গেছি। অতঃপর, জানা যায়, কোথায় এসেছি, কতদূর এসেছি। মানুষ তার আদর্শিক অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতেও অলস। বরং, অন্যের অপেক্ষায় থাকে। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা। অন্যের সিদ্ধান্ত দেখে ছুটে চলা। খুব শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না। মানুষ বরাবরই ছায়াপ্রিয়। অনুসন্ধানী হতে চায় না। সত্যান্বেষী হয়ে বিপ্লব করতে চায় না।
বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীন গণতন্ত্র সবার আগে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর ৫টি অসুখ সারিয়ে দলকে জাতীয়তাবাদী হিসাবে প্রমাণ করতে হবে। অতঃপর বাংলাদেশকে উচ্চ আয়ের দেশ করার জন্য রাজনীতি করতে হবে। রাষ্ট্রের সেবক হওয়ার জন্য লড়াই করতে হবে। জনশ্রেণিকে তখন বলতে হবে, আমাদের কে বেছে নাও।
কাজেই বিএনপি পুনর্গঠন জরুরী। কথিত সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে নাশকতা করার প্রস্তুতি রুখতে হবে। আমি ভেবেছিলাম যে, তাঁরা ৫টি অসুখ সারিয়ে অর্থবহ উদ্যোগে যেয়ে জনমানুষের দল হবে। না, একটি সমাবেশেও বাংলাদেশের জন্য তাঁদের কোন বার্তা নেই। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দন্ডিত কোন ব্যক্তিসত্তার কাছে থাকতে পারবে না। কাজেই উপর থেকেই দলের পুনর্গঠন করা জরুরী। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাফ কথা।
জাতীয়তবাদকে উদ্ধার করতে হবে। যা রাজনৈতিক অপশক্তি হয়ে পড়া বিএনপির কথিত নেতাদের ডেস্কে বন্দী রয়েছে। জাতীয়তাবাদের ওপর মোট তিনটি সংজ্ঞা প্রদান করেছি। যেমন একটি, জাতীয়তাবাদ হল একটি সুবর্ণ রেখা, যে রেখার উপর ভর করে দেশাত্মবোধক ধারণা নিয়ে নিজেদের সংস্কৃতির অস্ত্র সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বলয়ের পাহারাদার হয়।
ছেলেরা যাচ্ছে পুনরায়। জাতীয়তাবাদকে উদ্ধার করতে। দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। সুনির্দিষ্ট ৫টি অসুখ সারাতে। ২৬ নভেম্বর, ২০২২ তারিখে বিএনপির কেন্দ্রিয় কার্যালয় অভিমুখে দলের ক্রান্তিকালীন সময়ের সদস্যরা যাবে। ঘোষণা করছি। বিএনপি কে মানুষের জন্য রাজনীতি করতে হবে। কি কি করতে চায় বাংলাদেশের জন্য তা স্পষ্ট করেই কথিত নেতাদের রাজনীতি করতে হবে । মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধশক্তিকে ছাড়তে পারছে কিনা স্পষ্ট করতে হবে। নাশকতা নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে দলকে পরিচালনা করতে হবে। বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা নয়, জনস্বার্থ উদ্ধার করেই রাজনীতি করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, এমন জনশ্রেণির সংখ্যা কম নয়। কাজেই কথিত সমাবেশ গুলোয় অমানুষদের অংশগ্রহণ মানেই নৈতিকতা বিজয়ী হল না। দলিয় বিপ্লব হবে, হতেই হবে।’
– কামরুল হাসান নাসিম।
আরও পড়ুন
২২ মার্চের পর নয়াপল্টনে ‘জনতার উচ্চ আদালত’ বসাবেন নাসিম
সারাবাংলা/এজেড/একে