Sunday 27 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আওয়ামী লীগ থেকে যুবলীগে ‘যোগ দিয়ে’ সভাপতি-সেক্রেটারি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ নভেম্বর ২০২২ ২০:১৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সম্মেলনের প্রায় ছয় মাস পর কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দিদারুল ইসলামকে সভাপতি ও জহুরুল ইসলাম জহুরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। উভয়েই আওয়ামী লীগের পদ থেকে যুবলীগে এসেছেন। সংগঠনটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সদ্যঘোষিত কমিটির একজন সহ-সভাপতি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তিন বছরের জন্য এ কমিটি অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির মধ্যে ৪১ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটির বাকি পদগুলো ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে পূরণ করে কেন্দ্র বরাবর জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সদ্যঘোষিত কমিটির সভাপতি দিদারুল ইসলাম একই সংগঠনের বিদায়ী কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন। তিনি কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। দক্ষিণের রাজনীতিতে তিনি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আওয়ামী লীগের পদে থেকেও যুবলীগের জেলা কমিটিতে সভাপতি পদ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দিদারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলাম। বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নামও দিদারুল আলম। তিনি কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নাম একই হওয়ায় সবাই গুলিয়ে ফেলছেন।’

বড়উঠান ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আমি দিদারুল আলম। আর যুবলীগের সভাপতি হয়েছেন দিদারুল ইসলাম। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। শিকলবাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ‍উনি আছেন কি না সেটি উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বলতে পারবেন।’

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে শিকলবাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম ফোরকান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দিদারুল ইসলাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আর আমি সাধারণ সম্পাদক। আমি ফেসবুকে দেখলাম, ‍তিনি দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি হয়েছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদ থেকে তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন কি না সেটা আমার জানা নেই।’

এ ছাড়া সদ্যঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুর বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। তিনি বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

মূল দল আওয়ামী লীগ ছেড়ে সহযোগী সংগঠনে পদ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জহুরুল ইসলাম জহুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাত্র। আর এখন হয়েছি পুরো একটি সাংগঠনিক জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আমি তো ছাত্রলীগ করার পর আর যুবলীগ করিনি। সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম। এখন যুবলীগের চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদক সারাদেশে যেহেতু ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মীদের দিয়ে সংগঠন সাজাচ্ছেন, যেহেতু একটা সুযোগ এসেছে, আমি পদটা নিয়েছি।’

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সভাপতি দিদারুল ইসলাম আওয়ামী লীগের কোনো পদে আছেন কি না আমার জানা নেই। সাধারণ সম্পাদক আমাদের কাছে আওয়ামী লীগ থেকে একটি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। কারণ মূল দলে থেকে সহযোগী সংগঠনের পদে আসার সুযোগ গঠনতন্ত্রে নেই।’

তবে জহুরুল আলম জহুর বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি।

সদ্যঘোষিত কমিটির সহ সভাপতিদের মধ্যে একজন নাসির উদ্দিন জাপান আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি পদে আছেন। পটিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল হান্নান লিটনকে দেওয়া হয়েছে জেলা যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ।

নতুন কমিটির বিষয়ে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতার সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তবে তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, ‘আগে দেখতাম, ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগে যোগ দিতে। এখন দেখছি আওয়ামী লীগ ছেড়ে এসে যুবলীগে যোগ দিচ্ছে। হয়তো সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো যোগ্য কাউকে পাননি কেন্দ্রীয় নেতারা। সেজন্য আওয়ামী লীগ থেকে এনে যুবলীগে পদ দিতে হয়েছে।’

এদিকে কমিটি ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যেই যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন দ্বিতীয় সহ সভাপতি পদে আসা পার্থসারথী চৌধুরী। তিনি দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এবার তিনি সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন।

জানতে চাইলে পার্থসারথী চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ১২ বছর দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছি। এবার কাউন্সিলে আমার নাম সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল। আমি জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলাম সভাপতি পদের জন্য। সহ সভাপতি পদের জন্য আলাদাভাবে সিভি জমা নেওয়া হয়েছিল। আমি যেহেতু সহ সভাপতি পদ চাইনি, সুতরাং এই পদে থাকাটা আমি সমীচীন বলে মনে করি না। সেজন্য আমি পদত্যাগ করেছি।’

দুই পৃষ্ঠার লিখিত পদত্যাগপত্র তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের ই-মেইল, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং দফতর সম্পাদকের হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

গত ২৮ মে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি পদে ১৩ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯ জন সহ মোট ৫২ জন পদপ্রত্যাশী কেন্দ্রে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১০ সালে। আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে সভাপতি ও পার্থসারথী চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

সারাবাংলা/আরডি/একে

আওয়ামী লীগ টপ নিউজ যুবলীগ সভাপতি সেক্রেটারি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর