Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১টি টয়লেট স্থাপনে ব্যয় ৭ লাখ টাকা, প্রশ্ন কমিশনের  

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৫০

ঢাকা: স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রকল্পে একটি কমিউনিটি টয়লেট স্থাপনেই খরচ ধরা হয়েছে ৭ লাখ টাকা। তবে এই ব্যয় অত্যাধিক বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি গভীর নলকূপের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৬০ টাকা। ২০০টি কমিউনিটি সোলার পাওয়ারড পিএসএফ স্থাপনে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি স্থানে খরচ ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

‘বাংলাদেশ জলবায়ু সহিষ্ণু টেকসই পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যয় প্রাক্কলন এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই এ প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলবে পরিকল্পনা কমিশন। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর আগামী ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। সেখানেই তোলা হবে প্রশ্ন।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৮৩৩টি গভীর নলকূপের জন্য ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি গভীর নলকূপের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৬০ হাজার ৬০ টাকা, যা অত্যধিক। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৫০০টি ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ডাবল প্ল্যাটফর্ম ডিপ বা শ্যালো টিউবওয়েল স্থাপনে ১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটির জন্য খরচ হবে ২ লাখ টাকা। ২০০টি কমিউনিটি সোলার পাওয়ারড পিএসএফ স্থাপনে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। প্রতিটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, যা অত্যাধিক বলে মনে করছে কমিশন। এসব ব্যয় নিয়েও জানতে চাওয়া হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতে, প্রকল্পের আওতায় ৫০টি কমিউনিটি ম্যানেজড অ্যাকুইফার রিচার্জ সিস্টেম স্থাপনে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যা অত্যধিক। এছাড়া ৬৮৫টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন উইথ ওয়াটার সাপ্লাই স্থাপনে ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি কমিউনিটি ল্যাট্রিন স্থাপনে ৭ লাখ ৭২৯ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যা অত্যধিক। প্রকল্পে ইমার্জেন্সি প্রিপারেশন রেসপন্স ও রিকভারির জন্য থোক বরাদ্দ হিসেবে ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, এ ব্যয় প্রস্তাব নিয়েও উঠবে আলোচনা। বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাডি এবং একুইফার ইনভেস্টিগেশনে থোক বরাদ্দ হিসেবে ৫ কোটি ৯ লাখ টাকা, সোশ্যাল মোবিলাইজেশন, আচরণ পরিবর্তন সংক্রান্ত ক্যাম্পেইন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রমোশনের ক্ষেত্রে ১৮ কোটি টাকা, ওয়াশ ইন স্কুল সফটওয়ার কার্যক্রমের জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, তা অত্যধিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে কমিশনের কাছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ওয়াশ সেক্টর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে থোক বরাদ্দ হিসেবে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা, এলজিআইএস দক্ষতা বৃদ্ধিতে ৩ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় ডিলারদের রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এসব ব্যয় নিয়েও পিইসি সভায় ব্যাখা চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে আরও বলা হয়, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। এক্ষেত্রে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রকল্পটি বাংলাদেশের ওয়াশ সেক্টরের উন্নয়নে ইউনিসেফের সহায়তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ইউনিসেফ, ডব্লিএইচও ইত্যাদি সংস্থার জরিপ ও স্ট্যাডির তথ্য ওপত্তের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন নির্ধারিত ফরমেটে ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা প্রয়োজন। এ বিষয়েও জানতে চাওয়া হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকারের বহুমুখী প্রচেষ্টা নেওয়ার ফলে বাংলাদেশ নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, স্যানিটেশন সিস্টেম ও স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে সুপেয় পানি সরবরাহের পরিধি ছিল ৬৮ শতাংশ। যা ২০১৮ সালে ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। খোলা স্থানে মলত্যাগের অভ্যাস প্রায় শূন্যের কোটায়। তবে সমাজের সকল স্তরের জনগোষ্ঠীর নিকট ওয়াশ পরিষেবা সমভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি, যা যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জিং।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ সেফলি ম্যানেজড পানি সরবরাহ হ্যান্ড হাইজিন সুবিধা দেওয়া হবে। ১০০ শতাংশ সেফলি ম্যানেজড স্যানিটেশন ব্যবস্থা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ সালে ওয়াশের জন্য জাতীয় ভিশন হলো এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার পানীয় জল সরবরাহ ও স্যানিটেশনের জন্য ১৫ বছর মেয়াদী সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। ২০২১ সালে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের জন্য পানি সরবরাহ, পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ও জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাসহ সেক্টর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও লক্ষ্যমাত্রা অংশ হিসেবে শহর ও গ্রাম অঞ্চলের জনগণের নিকট পরিবেশবান্ধব, টেকসই, সাশ্রয়ী ওয়াশ সেবা সম্প্রসারণের জন্য মোট ২৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই হতে ২০২৭ সালের জুনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রকল্পটি নিয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ১৪২টি তারা ডেভহেড বা সাব-মার্সিবল পাম্পসহ অগভীর নলকূপ স্থাপন, ৯৪৪টি পাম্পসহ গভীর নলকূপ স্থাপন, ৮৩৩টি তারা ডেভহেড গভীর নলকূপ স্থাপন, ২৬৬টি হাউজহোল্ড রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং স্থাপন এবং ৫০টি কমিউনিটি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং স্থাপন করা হবে।

প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি দেশের ২৯টি জেলার ৪৩টি উপজেলা, ৮টি সিটি করপোরেশন ও ৫টি পৌরসভায় বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে সমাপ্ত ওয়াটার সাপ্লাই স্যানিটেশন এবং হাইজিন প্রকল্পটি ৪০টি উপজেলা, ৩টি সিটি করপোরেশন ও ১৩টি পৌরসভায় বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ একটি প্রকল্প চলমান আছে।

বৈদেশিক অর্থায়নের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ২৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইউনিসেফের অনুদান হিসেবে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২২০ কোটি ১ লাখ ২২ হাজার টাকা অনুদান হিসাবে পাওয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে এরকম অতিরিক্ত ব্যয় কাম্য নয়। বাজার দরের চেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হলে সেটি মেনে নেবে না পরিকল্পনা কমিশন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সেক্টরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে এসব ব্যয়ের বিষয়ে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। পিইসি সভার পরই জানা যাবে, এ প্রকল্পের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/জেজে/এনএস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর