Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আবাসন সমস্যা সমাধানে জাবিতে ছাত্রীদের রাতভর বিক্ষোভ

জাবি করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২২ ০৮:১৫

জাবিতে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা, ছবি: সারাবাংলা

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রীদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক হলের আসন বণ্টনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে গতকাল বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাত ১১টা থেকে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে ফজিলাতুন্নেছা হলের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এর আড়ে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় নতুন হলের আসন বিন্যাসে অগ্রাধিকারের দাবিতে মতবিনিময় সভা করেন হল প্রভোস্ট। কিন্তু ছাত্রীরা ৫টি দাবি উত্থাপন করলে হল প্রশাসন মানতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রীরা।

শিক্ষার্থীদের লিখিত ৫টি দাবির মধ্যে রয়েছে- আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফজিলাতুন্নেসা হলের আবাসন স্থানান্তর নিশ্চিত করা, প্রথম উদ্বোধনকৃত হলের নাম ‘ফজিলাতুন্নেসা’ রাখা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফজিলাতুন্নেসার সকল ছাত্রীদের আবাসন নিশ্চিত করে, সকল ছাত্রীদের একসঙ্গে স্থানান্তর করা এবং অতিদ্রুত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো।

ফজিলাতুন্নেছা হলের ৪৪ ব্যাচের ছাত্রী জুলফিশাহ্ রাবেয়া মুমু বলেন, ‘প্রতিটি হল থেকে ১০০ জন করে নতুন হলে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তে আমাদের সঙ্গে প্রহসন করা হয়েছে। কেননা গত দুই বছর থেকে প্রতিশ্রুতি শুনছি আমাদের দুর্ভোগকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বপ্রথম এই হলের ছাত্রীদের নতুন হলে উঠানো হবে। কিন্তু হঠাৎ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক হল থেকে ছাত্রী নেওয়া হবে। যা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা।’

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

৪৯ ব্যাচের ছাত্রী তানজিনা তাবাসসুম তন্দ্রা বলেন, ‘নতুন হলে উঠানোর কথা বলে এখানে কোনো ধরনের সংস্কার কাজ হয় না দুই বছর ধরে। এখানকার ওয়াশরুমগুলো ব্যবহারের অযোগ্য, রিডিং রুম-ডাইনিং রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। তাছাড়া স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, বৃষ্টিতে পানির ছিটার কারণে এখানে থাকা আমাদের পক্ষে অসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

৪৮ ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের মনি নাসরীন বলেন, ‘আমাদের অনেকেই চতুর্থ বর্ষে এসেও গণরুমে থাকতে হচ্ছে। এই অমানবিক পরিবেশ আমাদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে।’

এসব বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগেই শিক্ষার্থীদের যে দাবি তা প্রভোস্ট কমিটির সভায় উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা যেসব সমস্যার ভুক্তভোগী, কম হলেও অন্য হলের শিক্ষার্থীরাও একই সমস্যার ভুক্তভোগী বলে জানিয়েছেন প্রভোস্টরা। আসলে প্রত্যকটি হলে গণরুম বন্ধ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এ সিদ্ধান্তের রিভিউ করতে গেলেও পুনরায় মিটিং করতে হবে। মিটিং হলে শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরা হবে।’

এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল হলে নবনির্মিত ২টি হলের আসন বণ্টনের বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সভাপতিত্বে হল সমূহের প্রভোস্টরা অংশ নেন। এতে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিটি হলের ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২০২১ শিক্ষার্ষের ১০০ জন শিক্ষার্থী নতুন হলে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানান্তরকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকা আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষা শাখায় জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে উপাচার্য কোনো একক সিদ্ধান্ত নেয়নি, প্রভোস্ট কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে গেলে পুনরায় প্রভোস্ট কমিটির সভায় তা করতে হবে। এটুকু সময় তো আমাদের দিতে হবে।’

তিনি আরও জানান, ‘এখন আমাদের হয় নতুন হল উদ্বোধন পেছাতে হবে অথবা গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি সব হল উদ্বোধনের জন্য দেরি করতে হয় তবে গণরুমের মধ্য দিয়েই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করতে হবে। আমরা গণরুম কখনোই চাই না। আর এখানে শিক্ষার্থীরা হলের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০০ জনের কথা বলেও তা প্রকৃতপক্ষে ৩০০ জনের কাছাকাছি।’

এদিকে ছাত্রীদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আরও উপস্থিত হয়েছিলেন প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান, সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোতাহার হোসেনসহ প্রমুখ। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন শিক্ষকরা।

সারাবাংলা/এনএস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর