মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষায় অভূতপূর্ব সাফল্য, দাবি আওয়ামী লীগের
১৭ নভেম্বর ২০২২ ১৮:০১
ঢাকা: ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এমনটিই স্লোগান ছিল ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের। তাতে বলা হয়েছিল ‘তারুণ্যের শক্তি— বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। তাই শিক্ষাখাতের অগ্রাধিকারে শুরু থেকেই শিক্ষার অধিকার ও মানোন্নয়নের ওপর অন্যতম অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ইশতেহারে গুরুত্বারোপ করা হয়। ফলে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষা প্রসারে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে দাবি করেন দলটির নেতারা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল খালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে শিক্ষাখাত একটি এলোমেলো অবস্থায় ছিল। এখন অনেকটি শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। পরীক্ষায় নকল বন্ধ করা হয়েছে। একমুখী শিক্ষা অনেকদিনের দাবি ছিল, তা চালু করা হয়েছে এসএসসি পর্যন্ত। এটি আমাদের জন্য বড় রকমের সাফল্য। সরকার উচ্চা শিক্ষার দিক থেকেও অনেক চেষ্টা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এখানে সব কাজ তো আর সরকার একাই করবে না, এখানে স্টেকহোল্ডারদেরও ভূমিকা থকে। সরকার চেষ্টা করছে, শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে মর্যাদা দিচ্ছে। এগুলো অবশ্যই ভালো দিক।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমলের তুলনায় আমাদের সরকারের সময় শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপুর্ব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে বলেই আমরা মনে করি। শিক্ষাখাতে ইশতেহারের আমাদের যা লক্ষ্য ছিল, তার বেশিরভাগের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা বলেন, ‘আমাদের সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার অধিকার ও মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহার প্রণয়ন করে থাকি। আমরা মনে করি, আমাদের সরকারের মেয়াদে শিক্ষা প্রসারে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে ইশতেহারে লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরে আর তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের।’
নির্বাচনী ইশহেতারের শুরুতে বলা হয়েছিল, ‘আজকের বিশ্ব জ্ঞান ও বিজ্ঞানের বিশ্ব। শিক্ষার ক্ষেত্রে যে জাতি যত সাফল্য অর্জন করবে, সে জাতি জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে ও মানবিক গুণাবলি বিকাশে ততটাই অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি লাভ করবে। অঙ্গীকার অনুযায়ী বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার শুরু থেকেই শিক্ষার অধিকার ও মানোন্নয়নের ওপর অন্যতম অগ্রাধিকার খাত হিসেবে গুরুত্বারোপ করে আসছে। ফলশ্রুতিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন শিক্ষা প্রসারে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’
লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় বলা আছে, ‘শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষা পাঠক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে- শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসন্ধিৎসা, জ্ঞান আহরণ এবং দেশ ও জাতির অবিকৃত সত্য ইতিহাস জানার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা। শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। ভাষা জ্ঞান ও গণিত জ্ঞানের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ভাষা ও গণিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত করা হবে। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। গত এক দশকে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঝরে পড়ার হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। স্কুল ফিডিং সকল গ্রামে, আধা মফস্বল শহরে এবং শহরের নিম্নবিত্তের স্কুলসমূহে পর্যায়ক্রমে সার্বজনীন করা হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের একমাত্র মানদণ্ড হবে মেধা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল সর্বতোভাবে বন্ধ করার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত ও সহায়তা প্রদান করা হবে। এজন্য বাজেট বৃদ্ধি করা হবে। সকল জেলায় অন্তত একটি প্রাইভেট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। মাদরাসা শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষার সাথে কর্মজীবনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদানের জন্য কারিকুলাম যুগোপযোগী করা হবে। নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় সকল বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আধুনিক শিক্ষা-ব্যবস্থায়ও তাদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে। সকল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরের বই ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রতিবন্ধীদেরও মানবসম্পদে পরিণত করা হবে। শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমুখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষা খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনও রয়ে গেছে, আগামী মেয়াদে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
সাফল্য ও অর্জনের দিক থেকে ইশতেহারে বলা হয়, ‘সুশিক্ষিত ও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে।… ২৬ হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৪২ হাজার শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে। বেসরকারি স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের বকেয়া পেনশন সুবিধা পরিশোধ করা হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার ৬৭২টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকের পদ সৃষ্টি এবং নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১ হাজার ৪৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।… স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করে ১ হাজার কোটি টাকা সিড মানি প্রদান করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায় পর্যন্ত মোট প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা উপবৃত্তিসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বৃত্তি প্রদান, ফল প্রকাশ, ভর্তি, পাঠ্যপুস্তকের ভার্সন ইত্যাদি বিষয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।… সকল উপজেলায় অন্তত একটি কলেজ ও একটি করে স্কুল সরকারিকরণ করা হয়েছে।… প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে ১০০টি উপজেলায় স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৮টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (৪টি মহিলা) স্থাপন এবং ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭৯ হাজার ৬১ শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছে। এমপিওভুক্ত ১ হাজার ৬৭৩টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ১৩ হাজার ৮৮৬ শিক্ষক শতভাগ বেতন সরকার থেকে পাচ্ছেন।’
এছাড়াও গত ১০ বছরে ৩৩৫টি মাদরাসা এমপিওভুক্ত হয়েছে। মোট ১ লাখ ২১ হাজার ৯২৬ জন এমপিওভুক্ত মাদরাসা শিক্ষক ১০০ শতাংশ বেতন সরকার থেকে পাচ্ছেন। কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে সমতুল্য এবং কওমী মাদরাসার দাওরায়ে (তাকমিল) স্তরের শিক্ষাকে এম এ সমতুল্য করা হয়েছে। কোরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থি আইন প্রণয়ন করা হবে না। সব ধর্মের শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের মেয়াদে ১৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচার, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ভেটেনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স, ডিজিটাল, ইসলামি আরবি, মেরিটাইম, প্রফেশনাল, ফ্যাশন ও টেক্সটাইল প্রভূতি বিশেষায়িত ও বিষয়ভিত্তিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এনআর/রমু