ক্যানসার চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় জরুরি
১৭ নভেম্বর ২০২২ ২২:৫৪
ঢাকা: দেশে প্রতিবছর আড়াই লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখনো অনেক পিছিয়ে। খাদ্যাভ্যাস আর অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের জন্যই দেশে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর যেসব ক্যান্সার আক্রান্তদের রেডিওথেরাপি প্রয়োজন হয় সেসব রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় কাজ করতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর আর্মি গলফ ক্লাবে দুই দিনব্যাপী অনকোলোজি ক্লাব আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক্যানসার কংগ্রেসে’ এসব কথা বলেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনকোলোজি ক্লাব বাংলাদেশ ও ক্যানসার কংগ্রেসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ হাই বলেন, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বে ক্যানসার রোগীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা আশঙ্কাজনক। দেশে বর্তমানে বিপুল জনগোষ্ঠী এই রোগে আক্রান্ত, যার অধিকাংশই চিকিৎসার আওতার বাইরে। আমাদের প্রধান সমস্যা ডায়াগনোসিস না করা। করোনায় সেটি আরও সংকটাবস্থায় পৌঁছেছিল।
তিনি বলেন, ‘দেশে ক্যানসার চিকিৎসার আধুনিকায়নে মানসম্পন্ন ও দক্ষ জনবল তৈরি করাই অনকোলোজি ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য। ক্যানসার জয় করতে এবং দেশের ক্রমবর্ধমান ক্যানসার রোগী ও তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে তরুণ চিকিৎসকদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার ইউনিট করার উদ্যোগ নিয়েছে। যা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। তবে এটি বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। গত কয়েক বছরে কিছু অবকাঠামো গড়ে উঠলেও চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখনো অনেক পিছিয়ে। সারা দেশে মাত্র ২৪টি রেডিওথেরাপি মেশিন। আরও অন্তত ৮০টি প্রয়োজন। যা সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয় ৷ যেহেতু উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায় এখানে এখনো স্বাস্থ্যবিমা গড়ে ওঠেনি, ফলে চিকিৎসা মেটাতে ব্যক্তিকে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। এটি কমাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের রেডিও অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোস্তাফা আজিজ সুমন বলেন, ‘ক্যানসার চিকিৎসায় আমাদের প্রধান সমস্যা গবেষণা নেই। এখনো দেশে প্রতিবছর কি পরিমাণ আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। ফলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থাও গড়ে উঠছে না।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই ক্যানসার চিকিৎসার খরচ অনেক বেশি। আমাদের অধিকাংশ মানুষ নিম্নমধ্যবিত্ত। তাদের একার পক্ষে এই অর্থ বহন করা সম্ভব নয়। তাই দরকার সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা রেডিওথেরাপি মেশিন সংকট। সরকারি ব্যবস্থাপনা ছাড়া আমাদের এই অবস্থা থেকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে আমাদের দেশে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে স্তন ও জরায়ু ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব বেশি। কিন্তু স্তন ক্যানসারের সচেতনতায় যতটা জোর দেওয়া হয়, সে তুলনায় জরায়ু ক্যানসারে হচ্ছে না।’
দুই দিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের একাডেমিক পার্টনার হিসেবে যুক্ত আছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, ইতালির বলোনিয়া ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টার সিঙ্গাপুর, ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটাল ও রাজীব গান্ধী ক্যানসার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার।
সব মিলিয়ে এই আয়োজনে বিশ্বের ১৮টি দেশের মোট ৪০ জন বিখ্যাত ক্যানসার বিশেষজ্ঞসহ ৭৫০ জন চিকিৎসক ও গবেষক অংশ নিয়েছেন।
সারাবাংলা/এসবি/একে